You are here
Home > বেসিক কম্পিউটার > বাংলা লেখার সফটওয়্যার সম্পর্কে বর্ণনা করো

বাংলা লেখার সফটওয়্যার সম্পর্কে বর্ণনা করো

বাংলা লেখার সফটওয়্যার সম্পর্কে বর্ণনা

বাংলা লেখার সফটওয়্যার সম্পর্কে বর্ণনা করো– এই প্রশ্নটি সচরাচর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক পরীক্ষায় ব্রড প্রশ্ন আকারে এসে থাকে। যাই হোক, আজকের নিবন্ধনটিতে আমরা মূলত বাংলা লেখার সফটওয়্যার সম্পর্কে বর্ণনা করতে চলেছি। তাই আপনি যদি বিস্তারিতভাবে বাংলা লেখার সফটওয়্যার নিয়ে জানতে চান তাহলে আজকের আলোচনার সাথে থাকুন। 

কেননা আজ আমরা বাংলা সফটওয়্যার এর ইতিহাস, বাংলা লেখার সফটওয়্যার এর ব্যবহারবিধি এবং বাংলা সফটওয়্যার এর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জানাবো এ টু জেড। তো এই বিষয় সম্পর্কে জানার পাশাপাশি আপনি যদি আরো জানতে চান, কিভাবে লেখালেখি করে ইনকাম করা যায় তাহলে চাকরির পাশাপাশি বাড়তি আয়ের উপায় সম্পর্কে জানুন। 

বাংলা লেখার সফটওয়্যার | বাংলা সফটওয়্যার নাম

বাংলা লেখার সফটওয়্যার হিসেবে ইতোমধ্যে অসংখ্য সফটওয়্যার তৈরি হয়েছে। কিন্তু সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় সফটওয়্যার হলো – লিপিকার, অভ্র, বাংলাওয়ার্ড, ইজি লার্ন বাংলা, সৌমিলি, বর্ণ, বিজয় ৫২, বেঙ্গলি টাইপিং টিউটর সহ প্রভৃতি। তবে এর মধ্যে আবার সবচেয়ে ব্যবহারযোগ্য সফটওয়্যার দুটি হচ্ছে অভ্র ও লিপিকার। অভ্র বাংলা সফটওয়্যার সম্পর্কে আমরা সবাই কমবেশি জানি। যেটা একদমই ফ্রিতে ব্যবহারযোগ্য। 

বাংলা সফটওয়্যার এর ইতিহাস | বাংলা লেখার সফটওয়্যার সম্পর্কিত বর্ণনা

বাংলা সফটওয়্যারের ইতিহাস অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা বাংলা লেখার সফটওয়্যার গুলো মাত্র একদিন দুইদিন বা হাতে গোনা কয়েক সপ্তাহর মধ্যে পরিপক্কতা পায়নি। মূলত এই সফটওয়্যার গুলো বিভিন্ন ধাপে ধাপে স্তরে স্তরে বিভিন্ন প্রোগ্রামারদের অবদানের ফলাফল হিসেবে আজকের অবস্থানে পৌঁছেছে। আর তাই বাংলা সফটওয়্যারের ইতিহাস মোটামুটি দীর্ঘসময়ের। 

তবে পুরনো সকল ঘটনা ও বিষয়বস্তু ঘাটাঘাটি করে এটা জানা গিয়েছে– বাংলা লেখার সফটওয়্যার এর প্রাক সূচনা যুগ মোটামুটি ১৯৬৫ সাল নাগাদ। কেননা সে সময় বিখ্যাত নাট্যকার ও বুদ্ধিজীবী নাম তার সহিত মুনির চৌধুরী, তিনি মুনির টাইপিং লেআউট সর্বপ্রথম আবিষ্কার করেন। আর এটা বানানোর উদ্দেশ্য ছিল টাইপরাইটারে বাংলা লেখা। আর অনেকেই এটা ধারণা করেন ইতিহাসের সর্বপ্রথম লেআউট ছিল এটাই। যার অবদান বাংলা সফটওয়্যার এর ইতিহাসে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। 

পরবর্তীতে কম্পিউটার ডিভাইসে কিভাবে বাংলা লেখা যায় এই নিয়ে সর্বপ্রথম চিন্তা মাথায় আসে।  আর তাই বাংলা সফটওয়্যারের এই সময়কে সূচনা যুগ বলা হয়। সময় কাজ ছিল ১৯৮২ থেকে ১৯৯২ পর্যন্ত। জানা যায় ১৯৮২ সালে বাংলাদেশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যালয়ের তড়িৎ কৌশল বিভাগের তত্ত্বাবধানে কম্পিউটারে বাংলা ব্যবহারের উপর গবেষণা শুরু হয়েছিল। আর তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব ছিলেন সৈয়দ মাহমুদুর রহমান। 

আর সেই গবেষণা শেষ হওয়ার পর তাদের মধ্য থেকে সর্বপ্রথম বাংলা সফটওয়্যার আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছিলেন সাইফ উদদোহা শহীদ নামের একজন। যিনি নাকি ছিলেন বেক্সিমকো নামক কোম্পানিতে কর্মরত একজন কর্মচারী মাত্র।  আর তার এবং তার টিমের অক্লান্ত পরিশ্রমের পর পরবর্তীতে বাংলা লেখার সর্বপ্রথম সফটওয়্যার হিসেবে প্রকাশ পায় শহীদ লিপি। যে নামটা তার নামের সাথে মিলিয়ে রাখা হয়। এরপরে আরেকটি সফটওয়্যার তৈরি হয় নাম তার মাইনুল লিপি। আর এই সফটওয়্যারের তৈরীর সময় ১৯৮৬ সাল বরাবর। 

আর এভাবেই একের পর এক বাংলা সফটওয়্যার তৈরি হতে শুরু হয়। এরপরে দুই বছর পর অর্থাৎ ১৯৮৮ সালের নভেম্বরের দিকে শামসুল হক চৌধুরী নামের একজন আবহ নামের একটি বাংলা সফটওয়্যার তৈরি করেন। অতঃপর ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নেন মোস্তফা জব্বার। কেননা তিনি একজন বিদেশীর পরামর্শে একটি ইংরেজি ফ্রন্ট এর অনুকরণে তৈরি করে ফেলেছিলেন বাংলা ফন্ট তন্বী সুনন্দা।  অতঃপর আবারো তৈরি করেছিলেন বিজয় সফটওয়্যার। এরপর তৈরি করেছিলেন 1990 সাল নাগাদ অনির্বাণ নামক আরও একটি বাংলা সফটওয়্যার, এরপরে ইতিহাসে আবারো বাংলা সফটওয়্যার হিসেবে উঠে আসে বসুন্ধরা নামের আরও একটি বাংলা সফটওয়্যার। 

যাই হোক এভাবে বাংলা সফটওয়্যার পদার্পণ করে উন্নতযোগে অর্থাৎ ১৯৯৩ থেকে ২০০৫ সময়সীমাতে। এরপর নবজাতক যুগে পদার্পণ করে। আর বাংলা সফটওয়্যার এর ইতিহাসে বর্ণনা করার এই পুরো সময়কে মূলত চারটি যুগে বিভক্ত করা হয়েছে। যার সর্বশেষ যুগের নাম ছিল নবজাতক যুগ এবং সময় ছিল 2006 সাল। 

কেননা নবজাতক যুগে বাংলা কম্পিউটার শিল্পে এক নতুন বিপ্লব ঘটে। মেহেদী হাসান, রিফাত উন নবী এবং ওমিক্র ল্যাবের সদস্যরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে তৈরি করেন অভ্রফোনেটিক। যেটা আজকের অভ্র বাংলা সফটওয়্যার নামে সর্বোচ্চ পরিচিত। যা এখনো আমরা ফ্রিতে ব্যবহার করছি। আর এটি এমনই একটি ব্যবহারযোগ্য সফটওয়্যার যার সাহায্যে খুব সহজভাবে বাংলা মাতৃভাষা কম্পিউটারের টাইপিং এর মাধ্যমে প্রকাশ করা সম্ভব হয়। যার উপকারিতার কথা বা প্রশংসা বলে কয়ে শেষ করার মত নয়। 

তো পাঠক বন্ধুরা, এই ছিল বাংলা লেখার সফটওয়্যার সম্পর্কে আমাদের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা। যাই হোক এখন আসুন বাংলা লেখার সফটওয়্যার এর সাথে সম্পর্কযুক্ত কিছু বিষয় নিয়ে জানি। আমরা মূলত এ পর্যায়ে কিছু কুয়েরি এবং কিছু জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আলোচনা করব। আশা করি আপনাদের কাজে লাগবে। তো বাংলা লেখার সফটওয়্যার সম্পর্কে জানার পর আপনি যদি আরো জানতে চান কোন সফটওয়্যার দিয়ে টাকা ইনকাম করা যায় এবং বাংলা লেখা ইংরেজি করার সফটওয়্যার সমূহ কি কি, তাহলে সাজেস্টকৃত আর্টিকেল দুটি এখনই পড়ুন। 

বাংলা লেখার সফটওয়্যার সম্পর্কে বর্ণনা

বাংলা সফটওয়্যার এর প্রয়োজনীয়তা 

বাংলা সফটওয়্যার এর একাধিক প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তবে এই সফটওয়্যার এর সর্বোচ্চ প্রয়োজনীয়তা হচ্ছে ভাষা সাপেক্ষে সহজ ব্যবহার করার সুযোগ। বাংলা সফটওয়্যার ব্যবহারকারীদের জন্য সহজ-সুবিধা জনক ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয় বাংলা সফটওয়্যার। বাংলা ভাষায় মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য বাংলা ভাষায় লেখনির মাধ্যমে কম্পিউটার অথবা মোবাইলে ফুটিয়ে তোলার জন্য বাংলা সফটওয়্যার ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা অতুলনীয়। 

এছাড়াও বাংলা সফটওয়্যার এর আরো বেশ কিছু প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আমরা যদি দেখি তাহলে এটি সামাজিক, আর্থিক, শিক্ষাগত ও প্রযুক্তিগত উভয় দিকের সাথে জড়িয়ে রয়েছে। বাংলা সফটওয়্যার এর অনেক অনেক সফটওয়্যার এর কথা নয় শুধুমাত্র অভ্র সফটওয়্যারটির কথা চিন্তা করুন, যেটা আমরা একদম ফ্রি তে ব্যবহার করতে পারছি এবং সাবলীলভাবে নিজেদের মাতৃভাষা বাংলায় সঠিক ও শুদ্ধভাবে লিখতে পারছি। 

মোবাইলে বাংলা লেখার সফটওয়্যার 

অভ্র, বিজয়, লিপিকার মূলত এই সফটওয়্যার গুলো আমরা কম্পিউটারে ব্যবহার করতে পারব এমনটা জানি। কিন্তু যখন মোবাইল ফোনের কথা আসে তখন অনেকেই এটা সার্চ করেন যে মোবাইলে বাংলা লেখার সফটওয়্যার ডাউনলোড করার কোন সিস্টেম রয়েছে কিনা বা এমনকি কোন অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার রয়েছে যেগুলো ডাউনলোড করা সম্ভব!

হ্যাঁ অবশ্যই, মোবাইলে বাংলা লেখার জন্য এমন অনেক সেরা অ্যাপ রয়েছে। যেগুলো আপনি সরাসরি গুগল প্লে স্টোরে গিয়ে ডাউনলোড করে ব্যবহার করতে পারেন। মোবাইলে বাংলা লেখার সেরা অ্যাপ হচ্ছে রিডমিক।  যেটা তৈরি করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র শামীম হাসনাত। সময়কাল ছিল ২০১২। আর তাই হাতে থাকাই স্মার্টফোনে ঝামেলা ছাড়া বাংলা লেখার জন্য চোখ বন্ধ করে এখনই ইনস্টল করে ফেলুন জনপ্রিয় এই মোবাইল অ্যাপ রিডমিক। 

এছাড়াও মোবাইলে শুরুর দিক থেকেই রয়েছে জিবোর্ড। যেটা গুগলের কিবোর্ড কে বোঝানো হয়। এই কীবোর্ডে পৃথিবীর অনেকগুলো ভাষায় লেখা যায় সেখানে বাংলাতেও খুব সুন্দর ভাবে লেখা সম্ভব। যেমন এই মুহূর্তে আমি এই কনটেন্টটি জিবোর্ড ব্যবহার করে লিখছি। তবে হ্যাঁ জি বোর্ড কিবোর্ড টি যদি আপনি ঝামেলা ছাড়া ব্যবহার করতে চান তাহলে অবশ্যই সেটিং টা ঠিকঠাক সেটআপ করতে হবে। এর জন্য আপনি এখনই দেখুন বাংলা লেখা ইংরেজি করার সফটওয়্যার সম্পর্কিত পোস্টটি। যে পোষ্টের আলোচনায় এটা উল্লেখ রয়েছে যে কিভাবে আপনি জিবোর্ড কিবোর্ডটি ভালোভাবে সেটআপ করতে পারবেন। 

বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর 

১. কম্পিউটারে বাংলা লেখার সফটওয়্যার নাম কি? 

✓ কম্পিউটারে বাংলা লেখার সফটওয়্যার এর নাম অভ্র কিবোর্ড। এছাড়াও আরো অসংখ্য বাংলা সফটওয়্যার রয়েছে। 

২. বাংলা টাইপিং সফটওয়্যার নয় কোনটি? 

✓ বাংলা টাইপিং সফটওয়্যার নয় কোনটি, এই প্রশ্নে যদি অপশন হিসেবে থেকে থাকে গুগল কিবোর্ড, বিজয় কিবোর্ড, অভ্র কিবোর্ড,  তাহলে সঠিক উত্তর হচ্ছে কোনটিই নয়। কেননা বিজয় ৫২ বাংলা টাইপিং সফটওয়্যার হিসেবে পরিচিত। আর এখানে বিজয় কিবোর্ড উল্লেখ রয়েছে। যাই হোক সঠিক উত্তর হচ্ছে বিজয় ৫২। আর এই প্রশ্নটির সাধারণত mcq আকারে এসে থাকে। 

৩. বাংলা ফন্ট আবিষ্কার করেন কে? 

✓ বাংলা ফন্ট আবিষ্কার করেন মেহেদী হাসান খান, যিনি একজন বাংলাদেশী চিকিৎসক ও প্রোগ্রামার ছিলেন এবং অভ্র কিবোর্ড তৈরি করেছেন এবং যেটা একদমই বিনামূল্যে ব্যবহারযোগ্য সফটওয়্যার হিসেবে ব্যবহার করা যাচ্ছে। 

৪. বাংলা লেখার সফটওয়্যার কোনটি? 

✓ ইতোমধ্যে আমরা বাংলা লেখার সফটওয়্যার এর নাম সাজেস্ট করেছি। মূলত mcq প্রশ্ন আকারে যদি এটা এসে থাকে তাহলে মিলিয়ে দেখুন যে কোন সফটওয়্যারটি বাংলা লেখার সফটওয়্যার হিসেবে পরিচিত আর কোনটি বাংলা লেখার সফটওয়্যার এর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত নয়। 

৫. অভ্র কিবোর্ড কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়? 

✓ অভ্র কিবোর্ড ২০০৩ সালের দিকে প্রতিষ্ঠিত হয় 

৬. সর্বপ্রথম প্রবর্তিত বাংলা লেখা সফটওয়্যারের নাম কি? 

✓ শহীদ লিপি। 

তো পাঠক বন্ধুরা, এই ছিল বাংলা লেখার সফটওয়্যার সম্পর্কে আজকের বর্ণনা। তো আলোচনাটি যদি ভালো লাগে পোস্টটি শেয়ার করুন। সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন আল্লাহ হাফেজ। 

Facebook Comments

Leave a Reply

Top