একজন শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে মুদ্রাস্ফীতিকে সামনে রেখে তাদের বাড়তি আয়ের উৎস করতে হলে লাভজন বিজনেস করা প্রয়োজন। কেননা সার্টিফিকেটের অভাবে যারা চাকরি পাচ্ছে না তাদেরও একটা সময় গিয়ে হাতখরচের টাকা কিংবা পুরো পরিবার চালানোর মতো অর্থ জোগাড় করার তাগাদা পড়তে পারে। এক্ষেত্রে স্টুডেন্ট বিজনেস বেছে নেওয়া সবচেয়ে কার্যকর ডিসিশন বলে জানিয়েছেন জনপ্রিয় ক্যারিয়ার। চলুন জেনে নিই কি সে জনপ্রিয় স্টুডেন্ট বিজনেস আইডিয়া এবং তা কিভাবে শুরু করা ক্যারিয়ার দাঁড় করানো যায়।
অনলাইন কোর্স বিজনেস
আজকাল অনেকেই নিজের স্কিল ডেভেলপমেন্ট করতে সবচেয়ে বেশি ফোকাস করে। এক্ষেত্রে অফলাইনের চাইতে অনেকেই অনলাইন কোর্সকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। আপনিও চাইলে এই সুযোগকে কাজে লাগাতে পারেন। পাশাপাশি নিজের একটি নির্দিষ্ট স্কিলকে ফোকাস করে তার উপর নিজে নিজে অনলাইনে কোর্স তৈরি করে তা নিয়ে বিজনেস করতে পারেন। যদি আপনার কোর্সের কনটেন্ট ও উপস্থাপনা উচ্চমানের হয় তাহলে ইউডেমি, স্কিলশেয়ার, লিন্ডা-এর মতো প্ল্যাটফর্মের সাহায্য নিয়ে সে-সব কোর্স সেল করে বিজনেস করতে পারেন।
এক্ষেত্রে আপনি যদি ছাত্রছাত্রীদের আপনার কোর্স কিনতে উৎসাহী করতে চান তাহলে আপনাকে কিছু ইউনিক মার্কেটিং আইডিয়ার সাহায্য নিতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি চাইলে কোনো একজন প্রফেশনাল বিজনেস প্রপোজাল রাইটারের সার্ভিস নিতে পারেন। তারা আপনাকে একটি কোর্স বায়িং প্রপোজাল তৈরি করে দিবে। যা হবে ইউনিক এবং আকর্ষণীয়! বলে রাখা ভালো এই বিজনেসে কিন্তু আপনাকে খুব একটা ইনভেস্ট করতে হবে না। তবে কোর্স তৈরি করতে পারার মতো স্মার্টনেস এবং স্কিল থাকতে হবে। ভালো ভিডিও এডিটিং এবং কমিউনিকেশন স্কিল থাকতে হবে।
ছাত্রজীবনে টাকা আয় করার সহজ উপায়গুলো কী?
ফাস্ট ফুডের বিজনেস
বাংলাদেশে একটি লাভজনক ব্যবসা হতে পারে এই ফাস্ট ফুডের বিজনেস। এক্ষেত্রে সেল করার জন্য একটি দোকানের প্রয়োজন পড়বে। তবে আপনি যদি অফলাইন বিজনেস করতে চান তাহলে অনলাইনেও ফাস্ট ফুড সেল করে আর্ন করতে পারেন। একটি ফেইসবুক পেইজ, বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্ট এবং একটি ওয়েবসাইট হতে পারে আপনার ফাস্ট ফুড বিজনেস থেকে আর্ন করা পারফেক্ট মাধ্যম। যেহেতু বাংলাদেশের মানুষ দারুণ খাদ্যপ্রিয় সেহেতু বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে এই ফাস্ট ফুডের বিজনেস বেশ ভালো চলবে।
যারা ফাস্ট ফুড বিজনেসে কথার চিন্তা করছেন তাদের জন্য বলে রাখা ভালো বাংলাদেশের ঢাকা বা চট্টগ্রাম শহরে এই ফাস্ট ফুডের ভালো চাহিদা রয়েছে। যদি আপনি অফিস এলাকায় অথবা জনপ্রিয় আবাসিক এলাকায় নিজের ফাস্ট ফুডের দোকানটি স্থাপন করেন তাহলে আশা করি আপনাকে সেল নিয়ে ভাবতে হবে না। যদি নিজে খাবার তৈরি করতে জানেন তাহলে তো কোনো কথাই নেই! আর যদি সেটি সম্ভব না হয় তাহলে বন-পাউরুটি কিনে তার পাশাপাশি অন্যান্য রেডিমেড ফাস্ট ফুড সেল করতে পারেন। চাইলে আপনার মা-বোন বিশেষ করে যাদের হাতের রান্না খুবই প্রফেশনাল মানের তাদের সাহায্য নিতে পারেন। চেষ্টা করবেন গতানুগতিক খাবারের চাইতে কিছুটা ইউনিক খাবার সার্ভ করতে। পাশাপাশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নাতার ব্যাপারটিকে শতভাগ গুরুত্ব দিবেন। একটি মোটামুটি মানের ফাস্ট ফুড বিজনেস শুরু করতে ১৫,০০০/- এর কাছাকাছি লাগতে পারে। আশা করি একজন স্টুডেন্ট হিসেবে এই টাকা ম্যানেজ করতে আপনার খুব একটা অসুবিধা হবে না।
সেলুন বিজনেস
মূলত বাংলাদেশের দ্রুত বেড়ে উঠা শিল্পগুলির মধ্যে একটি হলো এই সেলুন বিজনেস। যাদের সৌন্দর্য এবং স্বাস্থ্যসেবার প্রতি অভিজ্ঞতা রয়েছে তারা এই ছোট্ট ইনভেস্টের বিজনেস দিয়েই ক্যারিয়ার শুরু করে দিতে পারেন। তবে অনেকেরই এই সেলুন বিজনেসে যথেষ্ট চুলকানি রয়েছে। অনেকের মতে এটি হলো সবচেয়ে নিকৃষ্ট কোনো একটি পেশা। কিন্তু এই ফ্যাশনের যুগে সেলুন বিজনেস হতে পারে আপনার স্মার্ট ক্যারিয়ার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। আজকাল ছেলে-মেয়ে উভয়ই হেয়ারস্টাইলের দিকে বেশ সচেতনতা অবলম্বন করে৷ অন্যান ফ্যাশনের মতো এটিও তাদের অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। আপনি চাইলে সেলুন বিজনেস করার মাধ্যমে এই সুযোগ নিতে পারেন।
সেলুন বিজনেস করতে গেলে একজন স্টুডেন্ট হিসেবে আপনার কাছে যে পরিমাণ ইনভেস্ট রয়েছে সেই পরিমাণ ইনভেস্টই যথেষ্ট। পাশাপাশি যারা ফ্যাশনকে প্যাশন মনে করেন তাদের জন্য তো সবচেয়ে পছন্দের কাজ হতে পারে এটি। যেখানে সেলুনের চাহিদা রয়েছে কিন্তু খুবই একটা সেলুন হাউস নেই অর্থ্যাৎ সিলেট, চট্টগ্রাম বা কক্সবাজারের মতো স্থানে আপনি এই সেলুন বিজনেস শুরু করে দিতে পারেন। যারা এই সেক্টরের কাজে খুব ইউনিক হওয়ার চেষ্টা করবে তাদের কাজের চাহিদা কখনোই কমবে না। এক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই সৎ হতে হবে এবং যেনোতেনো প্রোডাক্ট ব্যবহার না করে ভালো কোনো ব্র্যান্ডের পণ্য ব্যবহারের প্রতি মনোযোগী হতে হবে। কোয়ালিটিকে সবসময় প্রাধান্য দিতে হবে।
ডিজিটাল ডোমেইন ফ্লিপিং
ডোমেইন নেম নিয়ে আগে খানিক পড়াশোনা করে নিয়ে আপনিও চাইলে ডিজিটাল ডোমেইন ফ্লিপিং বিজনেস শুরু করে দিতে পারেন৷ কেনোনা বর্তমানে বর্তমানের চাকরির পাশাপাশি বিজনেস হিসেবে ডিজিটাল ডোমেইন ফ্লিপিং বেশ লাভবান হয়ে উঠছে। এক্ষেত্রে আপনি ফ্লিপা, ওয়েবসাইট ব্রোকার, গো ড্যাডি, সেডো ইত্যাদি ওয়েবসাইটের সাহায্য নিতে পারেন। এসব ওয়েবসাইট হলো ডোমেইন বায়িং-সেলিং ওয়েবসাইট। যেখানে আপনি আপনার ডিজিটাল ডোমেইন ফ্লিপিং বিজনেসকে আরো গ্রো করতে পারবেন। এসব ওয়েবসাইটে নিয়মিত এক্টিভ থাকলে ডোমেইন প্রাইজের ওঠা-নামা সম্পর্কেও জানতে পারবেন।
ডিজিটাল ডোমেইন ফ্লিপিং বিজনেস সম্পর্কে যারা এখনো বুঝতে পারছেন না, তাদের জন্য বলে রাখা ভালো কিভাবে এই বিজনেসটি করা হয়ে থাকে। ডিজিটাল ডোমেইন ফ্লিপিং বিজনেসের ক্ষেত্রে সাধারণত অনলাইন ডোমেইন নেম কিনে রেখে পরবর্তীতে বেশি দামে সেই ডোমেইন বিক্রি করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে সরাসরি এই বিজনেসে নতুন কেউ নেমে পড়লে খুব একটা সুবিধা করতে পারবে বলে মনে হয় না। তবে কেউ যদি এই বিজনেসে নামার আগে কোন ডোমেইন নেম-এর পরবর্তীকালে চাহিদা কেমন তৈরি হতে পারে তা নিয়ে রিসার্চ করতে পারে তাহলে সফল হতে খুব একটা সময় লাগবে না। এই ডিজিটাল ডোমেইন ফ্লিপিং বিজনেসে খুব বেশি সময় দিতে না হলেও আপনাকে সঠিক কৌশল নিয়ে ঠিক মতো ডোমেইন কিনে রাখার জন্য কিছু টাকা ইনভেস্ট করতে হবে।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
এটিও বর্তমানে জনপ্রিয় স্টুডেন্ট বিজনেস। যা করে অনেকেই নিজের সফল ক্যারিয়ার বিল্ড আপ করছে। এই মার্কেটিং কিন্তু আপনি অনলাইন + অফলাইন দুইভাবেই করা যায়। পাশাপাশি এই বিজনেসে ইনভেস্ট একেবারে করতে হয় না বললেই চলে। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে কোনও পণ্য বা পরিষেবার প্রচারের বিনিময় কমিশন দেওয়া হয় এবং সেই কমিশনই হয় একজন মার্কেটারের ইনকাম। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটি করতে হলে আপনার বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্ট এবং একটি ওয়েবসাইটের প্রয়োজন পড়বে। এসবের পেছনেই মূলত আপনাকে টুকটাক ইনভেস্ট করতে হবে। প্রোডাক্ট কেনার মতো ঝামেলা এখানে নেই।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সাধারণত অনলাইনে সবচেয়ে বেশি সফল হয়। এক্ষেত্রে ওয়েবসাইট গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। নির্ধারিত সাইট বা ব্লগে নিয়মিত উচ্চ মানের আকর্ষণীয় লেখা পাবলিশ করার সময় তাতে অ্যাফিলিয়েট লিংকের এক্সটার্নাল লিংক বসিয়ে দিতে হবে। সেই লিংকে কেউ যদি ক্লিক করে সেল আসে তার কিছু কমিশন স্টুডেন্ট বিজনেসম্যান হিসেবে আপনি পাবেন।
স্টুডেন্টদের জন্য উপরের অনলাইন বিজনেসগুলি বেশ জনপ্রিয় হলেও দিনশেষে আপনার হয়তো কোনও ব্যক্তিগত সময়ই অবশিষ্ট থাকবে না। একজন স্টুডেন্ট হিসেবে পড়ার সময়টুকুকেও কোনোভাবেই নষ্ট করা যাবে না। উপরের প্রতিটি বিজনেস যদি আপনি ঠিকঠাকমতো শুরু করে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারেন তাহলে এতে প্রচুর মুনাফা অর্জন করা সম্ভব। আশা করি আমাদের আজকের এই বাংলাদেশের মতো দেশে লাভজনক বিজনেস ধারণা সম্পর্কে লেখা আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে। কোনো ধরণের অভিযোগ বা প্রশ্ন থাকলে জানাতে পারেন! আশা করি উপকৃত হতে সাহায্য করতে পারবো।