You are here
Home > ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার > ফ্রিল্যান্সারদের পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট কেন জরুরি

ফ্রিল্যান্সারদের পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট কেন জরুরি

পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট

 

যুদ্ধ করতে গেলে আপনার নিশ্চয়ই তলোয়ারের প্রয়োজন হবে, তেমনি প্রযুক্তির এই যুগে চাকরির বাজারে টিকে থাকতে হলে একটা পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট থাকাটাও জরুরি। চলুন এবার গল্পে গল্পে শিখি। সে অনেক আগের কথা, আমি যখন প্রথম ফ্রিল্যান্সিং এর একটি রাইটিং গ্রুপ এ ছিলাম তখন দেখতাম সবাই তাদের পোর্টফোলিও শেয়ার করছে যাতে ক্লায়েন্ট তার কাজ দেখে ইম্প্রেস হয়ে কাজ দেয়। কিন্তু সেই সময় টা তে পোর্টফলিও জিনিস টা কি কিছুই বুঝতাম না। তারপর আপনারই মতো গুগলে সার্চ করে আইডিয়া নিলাম। গল্পের এখানেই শেষ না, পুরো আর্টিকেল টা পড়তে থাকুন। মনে হয় আমার মত প্রায় প্রতিটি ফ্রিল্যান্সার এর ক্যারিয়ার শুরু হয় পোর্টফোলিও জিনিসটার প্রতি কিউরিওসিটি নিয়ে। তবে এক্সেপশোনাল কেও কেও থাকতে পারে যাদের বড় ভাই-বোন কিংবা কাছের কেও এই পেশায় আগে থেকে ছিলো। তাহলে আজ থেকে আর কোনো কিউরিওসিটি নয়, পোর্টফোলিও কি তা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো এবং ফ্রিল্যান্সারদের জন্য পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট কেন জরুরি তা ও আলোচনা করা হবে।

ফ্রিল্যান্সিং কি? ক্যারিয়ার হিসাবে ফ্রিল্যান্সিং শুরুর আগে যা জানতে হবে!

 

পোর্টফোলিও কিঃ

সাধারণ অর্থে পোর্টফোলিও হচ্ছে একজন ফ্রিল্যান্সার যে বিষয় নিয়ে কাজ করে সেই বিষয় এর কিছু স্যাম্পল একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সংরক্ষণ করে রাখা হয়, হতে পারে সেটা ওয়েবসাইট কিংবা গুগল ডোক ফাইল ইত্যাদি। সংরক্ষিত ফাইল টি যাতে ক্লায়েন্ট কে দেখিয়ে তার পূর্বের কাজের অভিজ্ঞতা বোঝানো যায়, এ কারনেই সব ফ্রিল্যান্সার তার নিজের একটা পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট তৈরি করে। কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া যাক যাতে বিষয় টি আপনার একদম ক্লেয়ার হয়ে যায়।



ধরুন আপনি একদিন মার্কেটে গেলেন। একটি বেবি শপের পাশ দিয়ে হাটছেন। এমন সময় দোকানের কর্মচারী আপনাকে ডাকছে “কি লাগবে নিয়ে যান”। আপনি তাকে রিতীমত এ্যাভোয়েড করলেন যেন শুনেও না শোনার ভান কারন ওটা বেবি শপ ছিলো। তারপরও কর্মচারী অনেক জোড়াজুড়ি করে আপনাকে দোকানের ভেতরে নিয়ে গিয়ে বললো ” কি লাগবে ম্যাম”? আপনি বললেন আপনার শাড়ি লাগবে কিন্তু আপনি দোকানের কোথাও শাড়ি দেখতে পেলেন না। সব যায়গায় শুধু বাচ্চাদের জামা-কাপড়। শাড়ির কথা শুনে দোকানের কর্মচারীরা বললেন ” আপনার কেমন শাড়ি লাগবে বলে যান, আর হাফ পেইমেন্ট দিয়ে যান ৩-৪ দিন পর এসে শাড়ি নিয়ে যাবেন। তখন কি আপনি তাদের কে বিশ্বাস করে টাকা দিবেন?  নিশ্চয়ই না। পোর্টফোলিও এর বেপারও ঠিক এমনই। আপনি যতই কাজ করুন না কেনো, ইভেন আপনি যদি কাজে দক্ষ ও হয়ে থাকেন কিন্তু আপনার যদি কোনো পোর্টফোলিও বা ডকুমেন্টস না থাকে তাহলে ক্লায়েন্ট আপনার শুধু মুখের কথা বিশ্বাস করবে না। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, আপনার পোর্টফোলিও কে বেবি শপের ভিতরের ভিজ্যুয়ালিটির সাথে তুলনা করা যায়।

ধরুন আপনার একটি খুব সুন্দর জমি আছে। যেখানে ভালো ফসল হয়। কোনো এক কারণে আপনার প্রচুর টাকার দরকার। ভালো জমি টা কে নিলামে তুলতে হবে। আপনি সহজ-সরল মানুষ। ডকুমেন্টস বা দলিল টাও হারিয়ে ফেলেছেন। এই অবস্থায় আপনার জমি যতই ভালো হোক কেও কি ক্রয় করতে আগ্রহী হবে। কখনোই না। পোর্টফোলিও টাও একজন ফ্রিল্যান্সার এর একটি দলিলের মতোই। 

পোর্টফোলিও হলো একজন ফ্রিল্যান্সার এর অর্জিত সকল জ্ঞান, অর্জন এবং দক্ষতাকে প্রকাশ করার একখণ্ড ডকুমেন্টস। একজন ক্লায়েন্ট যখন আপনাকে কাজ দিবে তখন সে আপনার পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট টি দেখে আপনার পূর্বের কাজ সম্পর্কে ধারণা নিবে। তারপর আপনার কাজ দেখে পছন্দ হলে সে আপনাকে কাজ দিবে। আপনার সব স্কিল গুলো যদি সুন্দর করে সাজানো থাকে, আপনার কাজের মান যদি ইকুয়ালিটিফুল হয় তাহলে ক্লায়েন্ট আপনার পোর্টফলিও দেখেই আপনাকে কাজ টি দিতে আগ্রহী হবে। এখন নিশ্চয়ই আপনার কাছে ক্লেয়ার পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট কি।



 

পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট যে জন্য জরুরি

আমার গল্পেই ফিরে যাওয়া যাক। রাইটিং গ্রুপ এ থাকার সুবিধার্তে একজন ক্লায়েন্ট আমাকে নক দিয়ে বললেন তার একজন রাইটার দরকার। তিনি আমার কাছে আমার পোর্টফোলিও চাইলেন। আমি তখন নতুন নতুন কাজ করছি, আগে অল্প পরিসরে লিখলেও সেগুলো সংরক্ষণ করিনি। আমি তখন লজ্জিত হয়ে বললাম ” আমি একজন ফ্রেশার রাইটার। আমার কোনো পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট নেই। তখন সে বললো ” সরি, তাহলে আপনাকে আমি কাজটার জন্য হায়ার করতে পারছি না। কারণ আমার একজন অভিজ্ঞ রাইটার লাগবে “। আমার গল্পটা পড়ে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন কাজের দক্ষতা, ডকুমেন্টস বা পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট নতুন কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে কতটা গুরুত্বপূর্ণ! পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট তৈরি করা অনেকের কাছেই অনেক ভেজাল এবং ব্যয়বহুল মনে হয়। আসলে কিন্তু এটি ওতটাও ব্যায়বহুল না, উপরের উদাহরণ পড়ে নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট তৈরি করার পেছনে যথেষ্ট যৌক্তিক কারণ রয়েছে।

 

নিজের স্কিল ডেভেলপ করতে সহায়কঃ

পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট শুধু মাত্র ক্লায়েন্ট কে ইম্প্রেস করেই না বরং আপনার স্কিল ডেভেলপ করতে ও সহায়তা করে। আপনার পোর্টফলিও তে যেহেতু উল্লেখ থাকবে আপনি কি কি করতে পারেন। সেহেতু আপনার কোথাও ঘাটতি থাকলে আপনি সেটা ডেভেলপ করার চেষ্টা করবেন। ডেভেলপ করবেন এই জন্য যে যাতে আপনার প্রফেশনাল পোর্টফোলিও এর মাধ্যমে একটা প্যাসিভ ইনকাম করতে পারেন।

পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে নিজের কাজের প্রচারঃ

প্রচারেই প্রসার” আপনি নিশ্চয়ই এই কথাটি শুনে থাকবেন। বেশি বেশি কাজ পেতে হলে আপনাকে বেশি বেশি আপনার দক্ষতার প্রচার করতে হবে। আপনার একটি পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট থাকলে সবাই আপনার কাজ সম্পর্কে অবগত হবে এবং আপনার কাজ ও আগের তুলনায় অনেক বেশি আসবে। ধরুন আপনি একজন ফোটোগ্রাফার। শখ করে অনেক সুন্দর সুন্দর ছবি তুলেছেন। কিন্তু সেটা ক্যামেরার ভেতরই সীমাবদ্ধ। কোনো পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট না থাকায় প্রচারের অভাবে আপনার ফোটোগ্রাফের তেমন প্রশার হলো না। আপনি জানলে অবাক হবেন, ফটোগ্রাফীর মাধ্যমে দেশের গন্ডি পেড়িয়ে নিজের কাজ কে বিদেশেও রিপ্রেজেন্ট করা সম্ভব। “ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক” চ্যানেল এর নাম কে-ই বা শোনেনি। এই চ্যানেলের মাসিক যে ম্যাগাজিন টা বের হয় সেখানে বাংলাদেশের কিছু ফোটোগ্রাফার এর তোলা ছবি কভার ফোটো তে স্থান করে নেয়। তাদের মধ্যে অন্যতম হলো কে.এম আসাদ এর ছবি। এতে সে শুধু নিজের কাজ কে নয় পুরো বাংলাদেশকেই যেনো রিপ্রেজেন্ট করেছে পুরো ওয়াল্ড এর সামনে। আপনার ও যদি থাকে এরকম দক্ষতা তাহলে আপনি ও নিজের তোলা ছবি গুলো নিজের সোশ্যাল মিডিয়া আইডি তে সীমাবদ্ধ না রেখে একটা পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট তৈরি করে সেখানে রাখুন, যাতে করে আপনার ফটোগ্রাফ এর প্রসার ঘটে। এতে আপনি ও দেশ পেরিয়ে হতে পারেন একজন আন্তর্জাতিক মানের ফটোগ্রাফার। 

 

পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট এর বিকল্প

আপনি যদি একদম নতুন ফ্রিল্যান্সার হয়ে থাকেন তাহলে আপনার আগেই পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট তৈরি করার কথা ভাবা কিছুটা বোকামি। কারণ এই সময়ে আপনি কোনো কাজেই তেমন দক্ষ হবেন না। আর আপনার ইনকাম ও খুব বেশি হবে না। তাই আপনার প্রথমেই উচিত হবে নিজের স্কিল গুলো কে ডেভেলপ করা এবং ইনকামের দিকে নজর দেওয়া। এ সময় পোর্টফোলিও এর বিকল্প হিসেবে আপনার স্যাম্পলগুলো কে আপাতত সাজিয়ে রাখার জন্য আপনি গুগল ডোক এর সহায়তা নিতে পারেন। কোনো ক্লায়েন্ট আপনার কাছে স্যাম্পল চাইলে আপনি ডোক ফাইল শেয়ার এর মাধ্যমে কাজ চালিয়ে গেলেন। তারপরে যখন দেখবেন আপনার স্কিল ডেভেলপ হয়েছে তখন আপনি আপনার পোর্টফলিও ওয়েবসাইট টি তৈরি করে ফেলুন।



নতুনদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার টিপস

আপনি রাইটার, ওয়েবসাইট ডেভেলপার, গ্রাফিকস ডিজাইনার যা-ই হোন না কেনো দিন শেষে আপনার কাজের প্রচারের জন্য পোর্টফোলিও ওয়েবসাইট অনেক জরুরি।

Facebook Comments
Top