You are here
Home > ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার > ফ্রিল্যান্সিং এ সফল হতে যে ৪ টি কাজ করবেন

ফ্রিল্যান্সিং এ সফল হতে যে ৪ টি কাজ করবেন

সফল ফ্রিল্যান্সার হতে করনীয়

 

বর্তমানে বাংলাদেশের চাকরির বাজার নাজুক। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটি সরকারি চাকরি জোটাতে গেলে শুধু ভালো ছাত্র-ছাত্রী হলেই হয় না, সাথে লাগে মামা, মন্ত্রীরাও! আর স্বজন প্রীতির কথা না হয় বাদ-ই দিলাম। তাই বর্তমানে বেকার যুবকদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। জনসংখ্যা জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে কিন্তু কর্মসংস্থান সেই হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে না। তাই বাংলাদেশের ইয়াং জেনারেশন ছুটছে ফ্রিল্যান্সিং এর দিকে। বেকারত্বের কড়াল ছোবল থেকে মুক্তি পেতে দেশের এখন হাজারো তরুণ তরুণী ফ্রিল্যান্সিং করছে। তবে আপনি যদি ফ্রিল্যান্সিং পেশায় নতুন হয়ে থাকেন এবং কিভাবে, আপনার কোন দক্ষতার দ্বারা ফ্রিল্যান্সিং করবেন এই নিয়ে হতাশায় পড়ে যান,তাহলে আমার পুরো আর্টিকেল টা পড়ে দেখুন হতাশা কেটে যাবে।

অনেকেই তো ফ্রিল্যান্সিং করে, তবে ক’জন হতে পেরেছে সফল ফ্রিল্যান্সার? নিশ্চয়ই বাংলাদেশে  সফল ফ্রিল্যান্সার এর সংখ্যা অতোটাও বেশি নয়। আমাদের দেশে ফ্রিল্যান্সিং শেখানো নিয়ে এখন রমরমা ব্যবসা চলে। তারা বেকার যুবকদের কে টার্গেট করে। তারা প্রচার চালায় ” ঘরে বসে মাসে আয় করুন ২০-৫০ হাজার টাকা “। আপনি যদি ওই অসাধু ব্যাবসায়ীদের বিজ্ঞাপন দেখে লোভে পরে ১মাসেই ২০-৫০ হাজার টাকা আয় করার কথা ভাবেন তাইলে আমি বলবো ফ্রিল্যান্সিং আপনার জন্য না। কারণ মান্থলি আপনাকে ২০-৫০ হাজার টাকা আয় করতে হলে আগে যে জিনিস টা দরকার তা হলো আপনার দক্ষতা। আর ওই সকল ট্রেনিং সেন্টার গুলো বেকার যুবকদের কে পুঁজি করে ট্রেনিং করানোর নামে হাজার হাজার টাকা আয় করে কিন্তু আপনি যদি ডেডিকেটেড না হন কাজের প্রতি, তাহলে তাদের ১০-১২ টা বেসিক ক্লাস এ আপনি কিছুই শিখতে পারবেন না। তাই  ফ্রিল্যান্সিং পেশায় সফল হতে হলে দরকার আপনার নিজের চেষ্টা, পরিশ্রম, মনোবল এবং আত্ত্ববিশ্বাস। এর পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং এ সফল হতে হলে যে ৪ টি বেসিক কাজ আপনাকে করতে হবে তা নিচে তুলে ধরা হলো।

ফ্রিল্যান্সিং এ সফলতা অর্জনের কিছু কৌশল জানতে পড়ুন

১.দক্ষতা অর্জন:

আপনি যদি প্রফেশনাল ফ্রিল্যান্সার হতে চান তাহলে আপনাকে সবচেয়ে আগে যে কাজটা করতে হবে তা হলো আপনা কে যে কোনো একটি বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। আপনি যদি বুঝতে না পারেন যে আপনি কোন বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করবেন তা হলে আমি আপনাকে সাজেস্ট করবো আপনি আপনার প্যাশন অনুযায়ী দক্ষতা অর্জন করুন। কারন একটি কাজে যদি আপনার প্যাশন না থাকে তাহলে সেই কাজ টা করতে গিয়ে আপনি অল্পতেই বোরিং ফিল করবেন। আপনার যদি ওয়েব ডিজাইনিং এর প্রতি ঝোক থাকে তাহলে আপনি আগে ভালো করে ওয়েব ডিজাইনিং এর উপর দক্ষতা অর্জন করুন। তারপর ফ্রিল্যান্সিং শুরু করুন। আপনি যদি খুব ভালো ডিজাইন করতে পারেন সব কিছু যেমন লোগো, টি-শার্ট, ভেক্টর আর্ট ইত্যাদি তাহলে আপনি গ্রাফিকস ডিজাইনার হতে পারেন। ফ্রিল্যান্সিং এ এরকম দুইশোর বেশি কাজ রয়েছে যা বলে শেষ করা যাবে না। তাই যেকোনো সেক্টরে কাজ করার জন্য আপনি আগে নিজেকে দক্ষ করুন। তারপর আপনার দক্ষতা মোতাবেক একটি পোর্টফলিও তৈরী করুন। কারণ একজন ক্লায়েন্ট আপনাকে কাজ দেওয়ার আগে দেখবে আপনি কি বিষয়ে দক্ষ। একজন ক্লায়েন্ট যেহেতু আপনাকে টাকা দিয়ে হায়ার করবে সেহেতু সে অবশ্যই চাইবে ভালো কাজ পারুক এমন কাওকে দিয়ে কাজ করাতে। আপনি যদি ভালো কাজ দিয়ে একজন ক্লায়েন্ট এর মন জয় করতে পারেন তাহলে অবশ্যই ক্লায়েন্ট টি তার পরবর্তী প্রজেক্ট টির জন্যও আপনাকেই হায়ার করবে। তাই সবচেয়ে আগে যে কাজটা আপনার না করলেই না তা হলো আপনার দক্ষতা অর্জন। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার প্যাশন কে আপনি প্রায়োরিটি দিন। একটা মজার ব্যাপার হলো ছোট বেলা থেকেই আমার লেখালেখির পেছনে ছিলো ভীষণ ঝোঁক। কোনো কিছু নিয়ে একটু ভাবলেই লিখে ফেলতাম ২/৩ পাতা। পরের দিন ক্লাসে ফ্রেন্ডদের কে সেগুলো পড়ে শোনালে তারা খুব মন দিয়ে শুনতো। তাই ফ্রিল্যান্সিং এ আমি কন্টেন্ট লিখতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। কারণ লেখালেখি আমার একটা প্যাশন। আবার আমার চাচাতো বোন খুব সুন্দর ভাবে ডিজাইন করতো ছোট থেকেই। সব ডিজাইন গুলোই হতো ইউনিক।  তাই আমার চাচাতো বোন গ্রাফিকস ডিজাইন এর দিকে এখন ঝুঁকছে। আপনি আপনার আগ্রহ অনুযায়ী বিষয় নির্ধারণ করতে পারেন। যেহেতু পেশাগুলো ক্রিয়েটিভ তাই আপনাকেও একজন সৃজনশীল মেধার মানুষ হতে হবে।

 

২.পোর্টফলিও উপস্থাপনা:

ফ্রিল্যান্সিং করতে গেলে আপনাকে বিভিন্ন সাইট এ আপনার নিজের একটি এ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। যেমন: ফাইভার, আপওয়ার্ক, ফ্রিল্যান্সার ডট কম ইত্যাদি। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে এ্যাকাউন্ট টি যেন একদম নির্ভূল হয়। কথায় আছে ” আগে দর্শনধারী পরে গুন বিচারী “। আপনি যদি ভুল বানান দিয়ে আপনার পোর্টফলিও তৈরী করেন অর্থাৎ অ্যাবাউট এ আপনার নিজের পরিচয় যদি আপনি ভুল ভাবে উপস্থাপন করেন তাহলে ক্লায়েন্টের ফার্স্ট ইম্প্রেশন টা-ই আপনার প্রতি নষ্ট হয়ে যাবে। তাই আপনি যদি ক্লায়েন্ট এর ফার্স্ট ইম্প্রেশন টা আপনার প্রতি পজিটিভ রাখতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে একটা ভালো পোর্টফলিও তৈরী করতে হবে। পোর্টফলিও তে আপনি কি কি বিষয়ে দক্ষ, আপনার একটা ফরমাল ছবি ইত্যাদি নির্ভূলভাবে উপস্থাপন করুন। যাতে একজন ক্লায়েন্ট আপনার পোর্টফলিও দেখলেই বুঝতে পারে আপনি কাজের প্রতি দক্ষ এবং ডেডিকেটেড। তাই আপনার এ্যাকাউন্ট টি প্রথম দেখাতেই যেনো ক্লায়েন্ট আপনাকে ডেডিকেটেড এবং আপনার কাজের প্রতি আস্থা রাখতে পারে সেরকম ভাবে আপনার অ্যাবাউট টি উপস্থাপন করুন।

 

৩.কমিউনিকেশন স্কিল:

লেখাটি এতক্ষণ মন দিয়ে না পড়লেও এখন মনযোগ বাড়ান। কারণ এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ স্কিল টার কথা বলতে যাচ্ছি। যে-ই দক্ষতা টা আপনার না থাকলে ফ্রিল্যান্সিং পেশা টা আপনাকে দিয়ে অসম্ভব।  একটা ভালো পোর্টফলিও তৈরী করার পাশাপাশি আপনাকে যে দক্ষতা টা ভালো মতো আয়ত্ত করতে হবে তা হলো কমিউনিকেশন স্কিল। ফ্রিল্যান্সিং কাজ টা অবশ্যই আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সে সম্পর্কে আপনি হয়তো অবগত আছেন। যেমন ফাইভার ডট কম বর্তমানে বাংলাদেশের ইয়াং জেনারেশন এর কাছে টপ পজিশনে রয়েছে।  ফাইভার এ কাজ করে দেশের অনেক তরুণ তরুণী। এটি কিন্তু একটি ইজরায়েলী প্ল্যাটফর্ম। সুতরাং আপনি যখন বাইরের দেশের লোকের সাথে কাজ করবেন তখন আপনাকে অবশ্যই ভালো ইংরেজি জানতে হবে। কারন আপনি যদি আপনার ক্লায়েন্ট এর সাথে কথাই বলতে না পারেন, আপনার যদি কমিউনিকেশন এ স্কিল টাই ভালো না থাকে তাহলে আপনার ক্লায়েন্ট কি বোঝাতে  চাচ্ছে এবং আপনি-ই বা কি বোঝাতে চাচ্ছেন তা সম্পূর্ণ-ই গোলমেলে হয়ে যাবে। তাই আপনাকে স্পোকেন ইংলিশ এর প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। আপনি যদি নতুন ফ্রিল্যান্সিং পেশায় আসতে চান তাহলে আজই আপনি স্পোকেন ইংলিশ এর প্রতি নড়ে চড়ে বসুন। কারণ কাজ পাওয়ার আগে একমাত্র ভালো ভাবে কথা বলার দ্বারাই আপনি আপনার ক্লায়েন্ট এর সাথে সখ্যতা গড়ে তুলতে পারবেন। কিন্তু এখানে ব্যাতিক্রমী একটি কথা হলো আপনি যদি বাংলাদেশের লোকাল ক্লায়েন্ট দের সাথে কাজ করতে চান সেক্ষেত্রে আপনাকে ইংরেজিতে কমিউনিকেশন এ দক্ষ না হলেও চলবে যেহুতু আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। বিদেশি ক্লায়েন্ট দের সাথে কাজ করতে চাইলে অবশ্যই আপনাকে ইংলিশ এ কমিউনিকেশন স্কিল ডেভেলপ করতে হবে এবং এর পাশাপাশি হিন্দি, উর্দু ভাষাও আয়ত্ত করতে পারেন।

 

৪. ব্যাংক স্টেটমেন্ট:

আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো ব্যাংক স্টেটমেন্ট। অর্থাৎ আপনি যে কাজ করলেন, কাজের বিনিময়ে আপনার ক্লায়েন্ট আপনাকে যে পেমেন্ট টা দিবে সেটা কিসের মাধ্যমে দিবে তা আপনার নির্ধারণ করতে হবে। আপনাকে এমন একটি মাধ্যমে পেমেন্ট নিতে হবে যে মাধ্যম টি ইন্টারন্যাশনাল ভাবে সাপোর্ট পায়। আপনি ইন্টারন্যাশনাল কার্ড অথবা আপনার ব্যাংক এর মাধ্যমে পেমেন্ট নিতে পারবেন। তবে এ ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে যেন ব্যাংক এ্যাকাউন্ট টি নির্ভূল হয়। তা না হলে আপনার কষ্ট করে উপার্জিত সব টাকা-ই জলে যাবে।

পরিশেষে: ফ্রিল্যান্সিং করার খুটিনাটি অর্থাৎ বেসিক গাইড লাইন টা নিশ্চয়ই পেয়ে গেছেন। মূলত এই ৪ টা কাজ বাদ দিলে আপনি ফ্রিল্যান্সিং এ বেশি দূর আগাতে পারবেন না। উপরের তথ্য গুলো মন দিয়ে পড়লে এবং ঠিক মতো আয়ত্ত করতে পারলে কেও আপনাকে আর সফল হওয়া থেকে আটকাতে পারবেনা। আবার শুধু আমার আর্টিকেল টি পড়লেই চলবে না আজই লেগে পড়ুন দক্ষতা অর্জনে। সফলতা ধরা দিবেই! 

Facebook Comments
Top