আপনি কি জানেন? ফ্রিল্যান্সিং এ আয়ের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান কত তম? তথ্যপ্রযুক্তির এই চরম উৎকর্ষতার যুগে পুরো বিশ্বই এখন হাতের মুঠোয়। প্রযুক্তির উন্নতি ত্বরান্বিত হওয়ার পাশাপাশি বাড়ছে মানুষের অনলাইন নির্ভরতা। শুধুই কি বিনোদনের খোরাক এই অনলাইন দুনিয়া? উত্তর টি যে কেউ নিশ্চিতরূপে বলতে পারবে যে “না”। অনলাইন দুনিয়ায় মানুষ শুধু বিনোদনের জন্যই আসেনা। বরং অনেক তরুণের কাছে আশীর্বাদ স্বরূপ এই অনলাইন। নিজের দক্ষতা এবং সৃজনশীলতাকে পুঁজি করে অনলাইনে কাজের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হচ্ছে অনেকে। এবং মাস শেষে পকেটে ভরছে একটা স্মার্ট ইনকাম। আর তারই ধারাবাহিকতায় আজ আমরা আলোচনা করবো টাকা ইনকাম করার সহজ উপায় বাংলাদেশে কোন কাজগুলোর মাধ্যমে।
যেমন: ডাটা এন্ট্রি, লীড জেনারেশন, ওয়েব রিসার্চ
কিন্তু হাতের নাগালে স্মার্টফোন কিংবা কম্পিউটার থাকা সত্ত্বেও অনলাইনে আয়ের স্বপ্ন দেখেও অনেকে শুরু করে উঠতে পারছে না যথাযথ দক্ষতা কিংবা দিকনির্দেশনার অভাবে। জটিল – কঠিন প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ কিংবা ডিজাইন, এনিমেশনে পারদর্শী হলেই যে কেবল অনলাইন থেকে আয় করা যাবে এমন বদ্ধমূল ধারণার কারণে অনলাইনে উপার্জন নিয়ে যেন একটা ধোয়াশার তৈরী হয় অনেকের মনে। তবে অনলাইনে এমন ও অনেক কাজ আছে যেগুলো তুলনামূলক সহজ, তুলনামূলক কম টেকনিক্যাল দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও করা যায়। কিন্তু এই কাজ গুলোর মাধ্যমে আয়ের পরিমাণ সামান্য নয়। তাই আজকে আপনাদের সাথে এমন তিনটি কাজ নিয়ে আলোচনা করব, এর যেকোন একটি করার মাধ্যমে স্বাবলম্বী হতে পারবেন আপনিও।
জেনে নিনঃ ছাত্রজীবনে টাকা আয় করার সহজ উপায়গুলো কী?
ডাটা এন্ট্রি
একজন ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মূলত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক লেনদেনের হিসাব-নিকাশ, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্ন তথ্য সহ নানাবিধ তথ্য অত্যন্ত নির্ভুল এবং সুনিপুণভাবে সংরক্ষণ করে থাকে। মূলত ক্লায়েন্টের কাঙ্ক্ষিত তথ্যাদি একটি ডেটাবেইজে সংরক্ষণ করে রাখাই একজন ডেটা এন্ট্রি অপারেটরের কাজ। বর্তমান সময়ে বিভিন্ন ছোট ছোট ই-কমার্স সাইট, স্টার্টআপ বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে ডেটা এন্ট্রি অপারেটরের চাহিদা। এসব নতুন এবং ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের বিভিন্ন তথ্য সংরক্ষণের কাজের জন্য ফুল টাইম কর্মী না রেখে বিভিন্ন ফ্রিল্যান্স ডেটা এন্ট্রি অপারেটর দিয়ে কাজ করার প্রবণতা দেখা যায়। ফাইভার, ফ্রিল্যান্সার ডট কম, পিপল পার হাওয়ার এর মতো জনপ্রিয় সব ফ্রিল্যান্সিং সাইট সহ অন্যান্য প্রায় সকল ফ্রিল্যান্সিং সাইটেই রয়েছে ডেটা এন্ট্রি অপারেটর হিসেবে কাজ করার সুযোগ।
প্রয়োজনীয় দক্ষতা
একজন পরিপূর্ণ ডাটা এন্ট্রি অপারেটর হতে চাইলে দুইটি বিষয়ে সবচেয়ে বেশি দক্ষতা থাকা আবশ্যকঃ
- টাইপিং এর ক্ষেত্রে দক্ষতা – নির্ভুল এবং দ্রুত টাইপিং করার ব্যাপারে সচেষ্ট থাকতে হবে।
- কম্পিউটারের ব্যসিক সফটওয়্যার জ্ঞান – মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, মাইক্রোসফট এক্সেল এসব অ্যাপ্লিকেশনের খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা থাকতে হবে।
এছাড়াও যোগাযোগ দক্ষতা, ইংরেজী ভাষাগত দক্ষতা, সময় ব্যবস্থাপনা এসব বিষয়েও দক্ষতার প্রয়োজন।
আর প্রজেক্টের ধরন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় দক্ষতায় ভিন্নতা দেখা যায়। অর্থাৎ একেকরকম ডেটা এন্ট্রি কাজের জন্য আলাদারকম দক্ষতার প্রয়োজন পড়ে। যেমন কিছু কিছু ডেটা এন্ট্রির কাজ প্রোগ্রামিং করেও করতে হয়। তাই আপনি যদি এই ধরনের প্রজেক্টে কাজ করতে চান তাহলে অবশ্যই প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ সম্পর্কে জানতে হবে।
কাজের ধরন
বিভিন্ন ধরনের ডেটা এন্ট্রির কাজ রয়েছে। প্রজেক্টের ধরন অনুযায়ী ডেটা এন্ট্রির কাজেও বৈচিত্র্যতা দেখা যায়।
- সাধারণ ডেটা এন্ট্রি কাজ – মাইক্রোসফট ওয়ার্ড কিংবা এক্সেলে ডেটা ইনপুট করা
- ডেটা স্ক্রাবিং – কোনো ডেটাবেজ থেকে ভুল তথ্য শনাক্ত করে সঠিক তথ্য প্রদান করা
- অনলাইন ফর্ম পূরণ বা সার্ভে – বিভিন্ন কোম্পানির জন্য সার্ভে ডেটা প্রদান করা
- কপি পেস্ট – বিভিন্ন ডেটাবেজের অনুরূপ তথ্য আরেকটি ডেটাবেজে বসানো
- ইমেইল প্রোসেসিং – কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য গ্রাহকদের হাজার হাজার ইমেইল এর বিভিন্ন তথ্যাদি সুবিন্যস্তভাবে সাজানো
- অডিও টু টেক্সট – কোনো একটি অডিও শুনে সেখান থেকে সেই অডিও এর কথাগুলো টেক্সট আকারে তৈরী করা
এছাড়াও কপিরাইটিং, ক্যাপচা এন্ট্রি, ক্যাপশনিং সহ আরো নানান ধরনের ডেটা এন্ট্রির কাজ রয়েছে।
লিড জেনারেশন
বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষের যুগে লিড জেনারেশন মার্কেটিং এর অন্যতম অংশ হিসেবে দাড়িয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তাঁদের নিজস্ব সেবা বা পণ্যের জন্য সঠিক গ্রাহকটি খুঁজে তার কাছে ঐ পণ্যের বিভিন্ন উপযোগিতা তুলে ধরে আকৃষ্ট করাই একজন লীড জেনারেশন স্পেশালিষ্ট বা লীড জেনারেটর এর কাজ। মূলত কোনো একটি প্রতিষ্ঠানের কাঙ্ক্ষিত গ্রাহকের তথ্যটি হচ্ছে লীড। এক্ষেত্রে একজন লিড জেনারেটর ঐ প্রতিষ্ঠানের কাঙ্ক্ষিত গ্রাহকের ইমেইল, ফোন নম্বর, লোকেশন কিংবা অন্যান্য তথ্যাদি সংগ্রহ করে দেয়। অতঃপর প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকদের তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করে তাদের আকৃষ্ট করার জন্য ঐ পণ্যগুলো তাদের চাহিদা বা রূচি অনুযায়ী উপস্থাপন করে। মোটকথা কাঙ্ক্ষিত গ্রাহক নির্বাচন করে তাদের চাহিদার বিষয়বস্তুকে মাথায় রেখে মার্কেটিং ক্যাম্পেইন চালায়। প্রায় সব ধরনের মার্কেটপ্লেসেই লীড জেনারেটরের চাহিদা তুমুল।
প্রয়োজনীয় দক্ষতা
একজন ভাল মানে লীড জেনারেটর হতে হলে নানাবিধ বিষয়ে পারদর্শী হতে হবে। সেইসাথে নিজস্ব নেটওয়ার্কিং থাকাও প্রয়োজন। যেসব দক্ষতাগুলো একজন লীড জেনারেটরের থাকা আবশ্যক
- লিড ম্যানেজমেন্ট – ইমেইল মার্কেটিং, কোল্ড কলিং, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর মাধ্যমে নতুন নতুন লীড সংগ্রহ করে CRM সফটওয়্যারে সাজানো বা খুব ভালভাবে বিন্যস্ত করতে জানতে হবে
- সেলস ম্যানেজমেন্ট – ওয়েবিনারস, নেটওয়ার্কিং, ইভেন্টস ইত্যাদি বিভিন্ন মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত গ্রাহকের সন্ধান খুঁজে বের করে পণ্য বা সেবাটির প্রসার ঘটাতে পারদর্শীতা থাকতে হবে
এছাড়াও বিশ্লেষণী দক্ষতা, যোগাযোগ দক্ষতা এবং প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট এই বিষয়গুলোতে বিশেষ পারদর্শী হতে হবে। সর্বোপরি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, সার্চ ইঞ্জিন গুলো ব্যবহারে বিশেষ দক্ষ থাকতে হবে।
কাজের ধরন
ক্লায়েন্টের আগ্রহ কিংবা প্রজেক্টের ধরন অনুযায়ী কাজের ধরনেও ভিন্নতা দেখা যায়।
- ইমেইল মার্কেটিং – তুলনামূলক বেশি পরিমাণ লীড তৈরী হয় ইমেইল আদান-প্রদানে। এক্ষেত্রে লীড জেনারেটররা কাঙ্ক্ষিত গ্রাহকদের ইনবক্সে বিভিন্ন মেইল পাঠায়
- সোশ্যাল মিডিয়া লীড জেনারেটশন – বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেমন, ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, টুইটার, লিংকডইন ইত্যাদির মাধ্যমে লীড তৈরী করা।
- অনলাইন সার্ভে – বিভিন্ন অনলাইন সার্ভের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত গ্রাহকদের বিভিন্ন তথ্যাদি সংগ্রহ করার দরুন তাঁদের রূচি-আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী পণ্য বা সেবার প্রচার
এছাড়াও অনলাইন এডভার্টাইজিং, ডিরেক্ট সেলিং সহ বিভিন্ন মাধ্যমে লীড জেনারেটররা কাজ করে থাকে।
ওয়েব রিসার্চ
একজন ওয়েব রিসার্চার মূলত কোনো ক্লায়েন্টের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিন বা সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম থেকে খুঁজে বের করে সুনিপুণভাবে একত্রিত করে ক্লায়েন্ট কে দিয়ে থাকে। অর্থাৎ গুগল ডক কিংবা স্প্রেডশিট এ ক্লায়েন্টের কাঙ্ক্ষিত তথ্য গুলো বিভিন্ন ওয়েবসাইট ঘেঁটে উপস্থাপন করে প্রদান করাই মূলত ওয়েব রিসার্চারের কাজ।
যেকোনো ধরনের ব্যবসারই প্রচার-প্রসারের জন্য গ্রাহকদের রূচি-অভিমত বুঝতে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা প্রয়োজন হয়। এছাড়াও গ্রাহকদের কাছে কোনো প্রতিষ্ঠানের সেবা বা পণ্যের বিভিন্ন তথ্য পৌছে দিতে হলেও তাদের বিভিন্ন তথ্যাদিব্জানতে হয়। এই তথ্য হতে পারে কাঙ্ক্ষিত গ্রাহকের ফেসবুক এড্রেস, ই-মেইল এড্রেস ইত্যাদি। শুধু গ্রাহকের কাছে পণ্যের বিপণন এর ক্ষেত্রেই নয় এছাড়াও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন তথ্যাদি যেকোন প্রতিষ্টানের প্রয়োজন হতে পারে যেমন, সাম্প্রতিক ট্রেন্ড, ওয়েবসাইটের ট্রাফিক, গ্রাহকদের ই-মেইল ইত্যাদি। তাই প্রযুক্তি নির্ভর এই যুগে সময়ের সাথে সাথে ওয়েব রিসার্চর চাহিদাও বাড়ছে। ছোট-বড় প্রায় সব ধরনের ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসেই রয়েছে ওয়েব রিসার্চ ক্ষেত্রটিতে কাজ করার সুযোগ।
প্রয়োজনীয় দক্ষতা
একজন ওয়েব রিসার্চার হতে চাইলে যে বিষয়গুলোতে পরিপূর্ণ দক্ষ হতে হবেঃ
- সার্চ ইঞ্জিন সম্পর্কিত জ্ঞান – অর্থাৎ বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিন যেমন, গুগল, ইয়াহু এরা কিভাবে কাজ করে এসম্পর্কে খুটিনাটি ধারণা
- কম্পিউটারের ব্যসিক সফটওয়্যার ব্যবহার – গুগল ডক এবং মাইক্রোসফট এক্সেল এইসব অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহারে দক্ষ হতে হবে
এছাড়াও ইংরেজি ভাষাগত দক্ষতা, যোগাযোগ দক্ষতা, সুষ্ঠু সময় ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি সর্বোপরি ইন্টারনেটের বিভিন্ন খুটিনাটি বিষয়াদি ব্যবহার সম্পর্কে পারদর্শীতা থাকতে হবে।
কাজের ধরন
চাহিদা এবং প্রয়োজনীয়তাভেদে কাজের ধরনেরও ভিন্নতা দেখা যায়। তবে আপনি যে বিষয় নিয়ে রিসার্চ করবেন সেই বিষয়ে কাজ করার পূর্ব অভিজ্ঞতা সবসময়ই কাজটি দ্রুত এবং নিখুঁতভাবে করার জন্য সহায়ক।
- ডেটা কালেকশন – কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি সংগ্রহ করে একত্রীকরণ
- ডেটাবেজ ম্যানেজমেন্টে – দরকারী এবং নির্ভুল তথ্য যাচাই করার পাশাপাশি অপ্রয়োজনীয় তথ্যগুলো বাদ দিয়ে সুবিন্যস্তভাবে বিভিন্ন তথ্যাদি সংরক্ষণ
- ডেটা বা ওয়েব মাইনিং – কাঙ্ক্ষিত গ্রাহকদের বিভিন্ন তথ্যাদি বিশ্লেষণপূর্বক একই বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন তথ্যগুলো সুবিন্যস্তকরণ
- বিজনেস রিসার্চ – বিভিন্ন আর্থিক তথ্যাবলী, গ্রাহকদের তথ্য, বিনিয়োগকারীদের তথ্য ছাড়াও বিভিন্ন তথ্যাদি অনুসন্ধান করা।
- ই–মেইল বা কন্ট্যাক্ট লিস্টিং – বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করে একটি নির্দিষ্ট কিংবা নির্ধারিত এলাকার মানুষজনের ই-মেইল, ফোন নাম্বার কিংবা বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা
এছাড়াও মার্কেট রিসার্চ, প্রোডাক্ট রিসার্চ সহ আরও নানাবিধ কাজ ওয়েব রিসার্চের অন্তর্ভুক্ত।
পরিশেষে আলোচ্য কাজগুলোর যেকোনো একটিতে পরিপূর্ণতা দক্ষতা এনে যেকোনো মার্কেটপ্লেসে কাজ করতে পারবেন আপনিও। তাই অনলাইন থেকে খুব সহজে আয় করতে চাইলে আর দেরী কেন। ধৈর্য্য এবং পরিশ্রমের মিশেলে কাজ করে নিজে স্বাবলম্বী হন এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে নিজ দেশকে সহায়তা করুন।