আমরা বিভিন্ন প্রয়ােজনে আবেদনপত্র লিখলেও চাকরির আবেদনপত্র লিখতে গিয়ে কিন্তু আমাদের খুবই সতর্ক থাকতে হয়। কেননা অনেকসময় অনেক চাকুরিদাতা এই চাকরির আবেদন পত্র লেখার ধরণ দেখেই এমপ্লোয়িকে বুঝে ফেলে! তার পরবর্তী পারফরম্যান্স কেমন হবে সেটি সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা অর্জন করে ফেলে। পড়াশুনা শেষ করে বা পড়াশুনা চলাকালীন অবস্থায় প্রথমবারের মতো চকুরির আবেদন পত্র লেখা নিয়ে যারা সমস্যায় আছেন আজকের আর্টিকেলটি তাদের জন্যই।
কেননা আজ আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো চকুরির আবেদন পত্র কাকে বলে, চাকরির জন্য আবেদন পত্র লেখার নিয়ম কি কি, বাংলায় চাকরির আবেদন পত্র লিখতে হলে কি কি বিষয় মাথায় রাখতে হবে, সিভি ও আবেদন পত্রের মধ্যে পার্থক্যগুলি কি কি, চাকরির জন্য সিভি লেখার সঠিক নিয়ম কি সে-সম্পর্কে! সুতরাং সাথেই থাকুন এবং জানুন কিভাবে আপনি আপনার চাকুরির আবেদন পত্রকে আরো প্রফেশনাল এবং আকর্ষণীয় বানাবেন!
বাংলাদেশিদের জন্য অনলাইনে চাকরি খোঁজার সেরা ওয়েবসাইট সম্পর্কে জানতে পড়ুন
চাকরির আবেদন পত্র কি?
সোজা বাংলায় বলতে গেলে বলতে হয় কোনাে ব্যবসায়িক বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা সংস্থার কোনাে পদে নিয়ােগ প্রাপ্তির উদ্দেশ্যে লিখিত কোনো পত্রকে চাকরির আবেদন পত্র বলা হয়। এক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই চাকুরির আবেদন পত্র লেখার আগে সেই প্রতিষ্ঠানের কাজ, কর্মকর্তার-কর্মচারীবৃন্দের কর্মকাণ্ড, চাকরি প্রত্যাশী ও প্রতিযোগিদের ধরন জেনে-বুঝে তবেই আবেদন করবেন! অনেকেই একাধারে অনেকগুলি প্রতিষ্ঠানে আবেদন পত্র জমা দিয়ে রাখে! বিশেষ করে যাদের সহজেই চাকুরি হয় না তাদের ক্ষেত্রে এমনটা ঘটে থাকে! অনেকগুলি আবেদন পত্র একসাথে জমা দেওয়ার কারণে তাদের মেন্টালিটিতে থাকে “যে প্রতিষ্ঠানে ডাকবে সে প্রতিষ্ঠানেই যাবো”! পরবর্তীতে দেখা যায় ভালো না লাগার কারণে চাকুরি ছেড়ে দিতে হয়। এমনটা কখনোই করা যাবে না! জেনে-বুঝে তবেই চাকুরির আবেদ পত্র লিখে তা পাঠাতে হবে।
যারা চাকুরির আবেদন পত্র লেখার বিষয়ে অন্যের দ্বারস্ত হয়ে পরামর্শটুকু না নিয়ে কিছু না জেনেই আবেদন পত্র লিখেন তারা কিন্তু দিনশেষে রিজেক্টেড হওয়ার আশংকায় ভোগেন। এই আশংকা থেকে রেহাই পেতে আজকের পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে বুঝুন।
চাকরির জন্য আবেদন পত্র লেখার নিয়ম কি?
চাকরির আবেদন পত্র লেখার আলাদা নিয়ম রয়েছে। এটি সরাসরি দরখাস্ত এর মতো করে লেখা যাবে না। মনে রাখবেন, চাকুরির আবেদন পত্র লেখার শুরুতে আবেদন পত্রের বামদিকে তারিখ উল্লেখ করতে হয়। এক্ষেত্রে আপনি যেই তারিখে আবেদন পত্রটি জমা দিবেন সেই তারিখটিই উল্ল্যেক করবেন।
যেহেতু এই আবেদন পত্র কোনো না কোনো চাকুরিদাতার উদ্দেশ্য লেখা সেহেতু আপনাকে তারিখ উল্লেখের পর বরাবর’ শব্দটি লিখতে হবে। অর্থ্যাৎ কারো কাছে কিংবা কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে আবেদন পত্রটি লিখতে হলে এই শব্দটি যুগ করতেই হবে।
এবার আপনাকে আপনি যে প্রতিষ্ঠানের জন্য চাকুরির আবেদন পত্রটি লেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেই প্রতিষ্ঠানে আপনার মতো চাকুরি করতে চাওয়া ব্যাক্তিকে জাস্টিফাই করার জন্য বরাদ্দকৃত কিংবা প্রতিষ্ঠানের নিয়ােগকর্তার পদ ও নিয়ােগকারী প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা লিখতে হবে। তবে এক্ষেত্রে যেসব প্রতিষ্ঠান পত্রিকার মাধ্যমে আবেদনপত্র আহ্বান করে সেসব প্রতিষ্ঠান এর জন্য চাকরির আবেদন পত্র লিখতে হলে আপনাকে চাকুরির নোটিশে উল্লেখিত পােস্ট বক্স নম্বরটি ব্যবহার করতে হবে। মূলত নিয়ােগকারী প্রতিষ্ঠান গােপনীয়তা রক্ষায় এমনটি করে থাকে বলে জানা যায়।
এবার আবেদন পত্রের বিষয় সেক্টরে আপনাকে প্রার্থিত পদের নাম উল্লেখ করে দিতে হবে। চেষ্টা করবেন পুরো বিষয়টিকে সুন্দরভাবে এক কথায় বিষয় সেক্টরে এক লাইনে লেখার। এক্ষেত্রে লেখার শুরুতে জনাব/মহােদয়/মহাত্মন’ বলে সম্বোধন করে লেখা শুরু করতে পারেন৷
এবার আপনাকে প্রয়োজনীয় তথ্য উল্লেখ করতে হবে। প্রথমে নিজের শুদ্ধ এবং পুরো নাম লিখবেন! অতঃপর নিজের মাতা-পিতার নাম, জন্ম তারিখ, ধর্ম, জাতীয়তা এবং বৈবাহিক অবস্থাসহ যাবতীয় ব্যাক্তিগত তথ্য (তবে অতিরিক্ত কোনো অযৌক্তিক তথ্য যোগ করা যাবে না) উল্লেখ করবেন! এবার আপনাকে নিজের স্থায়ী ও অস্থায়ী ঠিকানা, যােগাযােগের উপায় হিসেবে মােবাইল/ফোন নম্বর কিংবা ই-মেইল আইডি দিতে হবে। চাকুরির ক্ষেত্রে স্মার্ট যোগাযোগ করতে আজকাল চাকুরিদাতারা ইমেইলকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকে। শেষে শিক্ষাগত যােগ্যতা ও অভিজ্ঞতা থাকলে সেই অভিজ্ঞতা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত এবং মার্জিতভাবে লিখে ফেলবেন। চাইলে যােগ্যতা, প্রশিক্ষণ, ভাষিক দক্ষতা উল্লেখ করতে পারেন! এতে আপনার চাকরিটি পাওয়ার আশংকা বেড়ে যাবে না। কেননা আজকাল বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বাড়তি দক্ষতাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়।
হয়ে গেলো আপনার আবেদন পত্র লেখা। এবার আপনি আবেদন পত্র যেসমস্ত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা এবং তথ্য দিয়েছেন সে-সব আপনাকে প্রমাণ করতে হবে। আর এই প্রমাণ করার একটাই ওয়ে আছে এবং সেটি হলো আবেদন পত্রের সাথে সংযুক্তি এড করা। এই সংযুক্তিতে থাকবে আপনার যাবতীয় এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষার সনদপত্র, প্রশংসাপত্র ও নম্বরপত্রের সত্যায়িত একটি করে ফটোকপি।
ফেইস এড্রেসের জন্য রিসেন্টলি তোলা রঙিন পাসপোের্ট সাইজের ছবির প্রয়োজন পড়বে। সেটি এড করে নিবের। এবার আপনাকে কোনো একজন প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা প্রদত্ত চারিত্রিক সনদপত্র যোগাড় করে নিতে হবে এবং এটি আবশ্যক। সবশেষে প্রয়োজন অনুসারে চাকুরির আবেদন পত্রে দুজন বিশিষ্ট ব্যক্তির প্রশংসাপত্র সংযুক্ত করতে হয়। তবে একটি অপশনাল। যে প্রতিষ্ঠান চাইবে সেই প্রতিষ্ঠানেই আবেদন করার ক্ষেত্রে এটির দরকার পড়বে। অন্যথায় না দিলেও চলবে!
বাংলায় চাকরির আবেদন পত্র লিখবেন কিভাবে?
ঠিক উপরে লেখা নিয়ম অনুসরণ করেই আপনি বাংলায় চাকরির আবেদন পত্র লিখে ফেলতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই ছোট করে আবেদন পত্র লেখার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। সেই সাথে সুন্দর এবং সাবলীল বাক্যের ব্যবহার তো থাকছেই! কোনো রূপ কপি পেস্ট না করে নিজের পুরো আবেদন পত্রটি লেখার চেষ্টা করবেন।
সিভি ও আবেদন পত্রের মধ্যে পার্থক্য কি?
মূলত চাকুরির আবেদন পত্র এবং সিভির মূল অংশগুলো একই রকমের। তবে খানিকটা পার্থক্য আছে। তা হলো সিভির লেখায় পৃষ্ঠার সীমাবদ্ধতা না থাকলে আবেদন পত্র কিন্তু সীমাবদ্ধতার সাথেই লিখতে হয়। তুলনামূলক বিস্তারিত তথ্য সিভিতে না দিলে প্রতিষ্ঠান আবেদনকারী সম্পর্কে জানতেই পারে না! মূলত এই সিভির কারণেই আবেদন পত্র সীমাবদ্ধতা সাথে লিখতে হয়। সিভি এড করা থাকে বলে নিয়োগকারী ওই সিভি থেকেই আবেদনকারীকে বুঝে নেই। মোটকথা সিভি বোঝানোর কাজ করে এবং আবেদন পত্র সেই বোঝানোর কাজকে ছোট্ট কথায় প্রেজেন্ট করে৷
চাকরির জন্য সিভি লেখার নিয়ম
ঠিক তখনই আপনার ইন্টারভিউ এর জন্য ডাক পাওয়ার সুযোগ খুবই কম যখন আপনার লেখাটা সিভিটি সঠিকভাবে সাজানো না থাকে কিংবা দেখতে প্রফেশনাল মনে না হয়। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে চাকরি জীবনের অনেক ক্ষেত্রেই যেহেতু সিভি লেখার দরকার পড়ে তাই সিভি লেখার নিয়ম সম্পর্কে আপনার জেনে রাখাটা কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। চলুন জেনে নিই সিভি লেখার নিয়ম কিংবা সিভিতে কি কি এড করতে হয় সে সম্পর্কে!
মিস্টার মিসেস এগুলো সংযুক্ত না করে সিভিতে সবার আগে যেটা যুক্ত করতে হবে সেটি হলো সার্টিফিকেট অনুযায়ী আপনার আসল এবং পূর্ণ নাম। মাথায় রাখতে হবে এখানে কোনো ডাকনামের স্থান নেই।
এবার সিভিতে আপনার ইমেইল অ্যাড্রেস যুক্ত করার পাশাপাশি নিজের এক্টিভ ফোন নাম্বারটিও যুক্ত করতে হবে। তবে অবশ্যই উল্টাপাল্টা কোনো ইমেইল যুক্ত করা থেকে বিরত থাকবেন।
চাকরিটি পেলে আপনি কি কি করতে চান, কি কি উদ্দেশ্য আছে ভবিষ্যতে তা নিয়ে বেশিতে ১০০ শব্দের একটি ছোট্ট এবং আকর্ষণীয় ম্যাসেল এড করুন।
এ-পর্যায়ে সিভিতে সংক্ষেপে আপনার কাজের বিবরন যতদুর সম্ভব তুলে ধরে আপনার প্রিভিয়াস কাজের অভিজ্ঞতা যুক্ত করুন। সঠিকভাবে যে পদের জন্য এখন আবেদন করছেন সে পদের সাথে প্রাসঙ্গিক অভিজ্ঞতা সম্পর্কে ধারণা দিন৷
এস.এস.সি থেকে শুরু করে পরের সব ডিগ্রি গুলোকে সঠিকভাবে প্রেজেন্ট করে ইন্সটিটিউটের নাম যুক্ত করুন। কোন কোন সালে পরীক্ষা গুলো দিয়েছেন তা লিখতে ভুলবেন না কিন্তু! কোর্সের ব্যাপারেও সেইম রুলস থাকবে।
আত্মীয়-স্বজনের নাম না দিয়ে রেফারেন্স সেক্টরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের রেফারেন্স কিংবা কোনো মানসম্মত পদে চাকুরি করার ব্যাক্তির রেফারেন্স দিন।
শেষ ধাপে নিজের পাসপোর্ট ছবির সাথে নিজের সাক্ষর এড করুন। এক্ষেত্রে প্রতিটি সিভিতে কিন্তু আবেদনকারীর স্বাক্ষরের স্ক্যান কপি এবং তারিখ সিভি’র নিচের অংশে যোগ করতে হয়।
শেষ কথা
বর্তমানে চাকরির বাজারে চাকরির আবেদন পত্র এবং সিভি খুবই গুরুত্বপূর্ণ পার্ট। যার উপর অনেকটাই আপনার চাকরি লাভের ব্যাপারটি নির্ভর করে। মনে রাখবেন একটি মানসম্মত চাকরির আবেদন পত্র এবং সিভি আপনার চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশেই বাড়িয়ে দেয়। আশা করি ব্যাপারটি সম্পর্কে আপন পুরোপুরি ক্লিয়ার হতে পেরেছেন। ধন্যবাদ সবাইকে।