You are here
Home > আপওয়ার্ক > ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস গুলোতে কাজ পাওয়ার উপায় কি?

ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস গুলোতে কাজ পাওয়ার উপায় কি?

ফ্রীল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস

 

সময়ের পরিবর্তনে, তথ্যপ্রযুক্তির বদৌলতে ফ্রিল্যান্সিং এখন অন্যতম জনপ্রিয় একটি পেশা। নিজের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে এবং সফলতার মুখ দেখছে হাজারো তরুণ। পক্ষান্তরে দক্ষতা থাকলেও সঠিক দিকনির্দেশনা এবং কৌশল জানার অভাবে মার্কেটপ্লেসগুলোতে কাজ না পেয়ে হতাশ হওয়ার সংখ্যাটাও নিতান্তই কম নয়। তবে আজকের পর থেকে আমরা ফ্রীল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলোতে কাজ পাওয়ার উপায় সম্পর্কে আর অজানা থাকবোনা।

 

মার্কেটপ্লেস কী?

মার্কেটপ্লেস হলো বায়ার এবং ফ্রিল্যান্সারদের মধ্যে সংযোগস্থাপনকারী একটি মাধ্যম বা ওয়েবসাইট। অর্থাৎ মার্কেটপ্লেসগুলোতে বায়াররা তাদের প্রয়োজনীয় কাজটি করার জন্য ঐ কাজটিতে অভিজ্ঞ ও দক্ষ ফ্রিল্যান্সার খোঁজ করে থাকেন। বায়ার তাঁর নির্দিষ্ট কাজটির জন্য ইচ্ছুক অনেকগুলো ফ্রিল্যান্সারের মধ্য থেকে যোগ্যতম ফ্রিল্যান্সার কে খুঁজে নিয়ে তাকে দিয়ে কাজটি করিয়ে থাকেন।আর ফ্রিল্যান্সাররা এসব মার্কেটপ্লেসে তাঁদের আকাঙখিত কাজটি খোঁজ করে থাকেন। পছন্দসই কাজটিতে আগ্রহ প্রকাশপুর্বক তাঁরা যোগ্যতার বিচারে
বায়ারের কাছ থেকে কাজ পেয়ে থাকে। এক্ষেত্রে বলা যায়,পারিশ্রমিকের বিনিময়ে একজন ফ্রিল্যান্সারকে দিয়ে বায়ার তাঁর প্রয়োজনীয় কাজ করিয়ে নেওয়ার মাধ্যমই হলো মার্কেটপ্লেস।

বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসের কাজের ধরন,পেমেন্ট মেথড এ বিভিন্নতা থাকে। জনপ্রিয় কিছু মার্কেটপ্লেস হলোঃ

Fiverr, Upwork, Freelancer.com, Envato, Guru.com, DesignCrowd, Nexxt, PeoplePerHour ইত্যাদি।

এছাড়াও আরো অনেক মার্কেটপ্লেস রয়েছে যেগুলো থেকে ফ্রিল্যান্সাররা তাঁদের কাঙখিত কাজগুলো পেয়ে থাকে। তবে সময়ের পরিক্রমায় এসকল মার্কেটপ্লেসগুলোতে প্রতিযোগির সংখ্যা ও বাড়ছে ক্রমশ। একটি কাজের বিপরীতে অসংখ্য প্রতিযোগী থাকে। তাই শুরুর দিকে একজন নতুন ফ্রিল্যান্সারের জন্য তার কাঙখিত কাজটি পাওয়া হয়ে উঠে দূরহ। তবে কিছু কৌশলগত ব্যাপার অবলম্বন করলে কাজ পাওয়ার পথ তুলনামূলক মসৃণ হয়ে যায়।



মার্কেটপ্লেস গুলোতে কাজ পেতে হলে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখা উচিতঃ

যোগ্যতা / দক্ষতা

ফ্রিল্যান্সিং এর ক্ষেত্র এবং পরিধি অনেক বিস্তৃত। ওয়েব ডেভেলপমেন্ট,গ্রাফিক্স ডিজাইন,কন্টেন্ট রাইটিং,ডিজিটাল মার্কেটিং সহ আরো অনেক ক্ষেত্র রয়েছে। আপনার পছন্দ অনুযায়ী কাজের ক্ষেত্র নির্বাচন করতে হবে। যেমন,আপনি যদি লেখালেখিতে পারদর্শী হন তবে কন্টেন্ট রাইটিং করতে পারেন কিংবা আপনি যদি আঁকাআকি করতে ভালবাসেন তবে গ্রাফিক্স ডিজাইন করতে পারেন। তবে একটি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে আপনি যে বিষয়ে কাজ করতে চান সেই বিষয়টিতে আপনাকে খুব বেশি দক্ষ হতে হবে।

 

প্রোফাইল তৈরী

আপনি যে মার্কেটপ্লেসে কাজ করতে চান প্রথমেই তার জন্য একটি প্রোফাইল বানাতে হবে। আকর্ষণীয় এবং তথ্য বহুল একটি প্রোফাইল অনলাইন মার্কেটপ্লেস গুলোতে আপনার কাজ পাবার প্রথম নিয়ামক। আপনি যে বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করেছেন সেই বিষয়ের বর্ণনা সহ একটি প্রোফাইল বানাতে হবে। আপনি যে বিষয়ে পারদর্শী তা সম্পূর্ণ রূপে তুলে ধরুন। যথাসম্ভব প্রোফাইলকে আকর্ষণীয় ভাবে উপস্থাপন করুন। কারণ বিডিং এর সময় ক্লায়েন্ট আপনার প্রোফাইল দেখেই সিদ্ধান্ত নিবে কাজটি আপনি পাবেন কি না।

 

প্রোফাইলে পোর্টফোলিও যুক্ত করা

ক্লায়েন্টের কাছে আপনার কাজের ধরণ এবং পারদর্শীতা বুঝানোর জন্য পোর্টফোলিও এর বিকল্প নেই। আপনি যে বিষয়ে পারদর্শী সে বিষয়ে করা আপনার কিছু কাজ পোর্টফোলিও তে রাখবেন। যেমন,আপনি যদি লোগো ডিজাইনিং করেন তাহলে আপনি আপনার তৈরী করা কিছু লোগো পোর্টফোলিও তে যোগ করবেন। এতে ক্লায়েন্ট আপনার প্রতি আশ্বস্ত হবে।আপনার কাজ করার ধরন সম্পর্কে বুঝতে পারবে। যা আপনার কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

 

ইংরেজী ভাষায় পারদর্শীতা

ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলোর বেশিরভাগ ক্লায়েন্টই পশ্চিমা দেশগুলোর। তাই ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলোর সিংহভাগ কাজই আসে পশ্চিমাদেশগুলো থেকে। তাছাড়াও বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ভাষার মানুষ এসব মার্কেটপ্লেসে কাজ করিয়ে থাকেন। এই বিভিন্ন ভাষার মানুষের জন্য সাধারণ ভাষা হিসেবে ইংরেজি ভাষাই ব্যবহার হয়ে থাকে। তাই আপনার ক্লায়েন্টের সাথে সঠিকভাবে যোগাযোগ করার জন্য ইংরেজী ভাষা বলা ও লেখায় কিছুটা পারদর্শী হতে হবে।



 

মার্কেটপ্লেস সম্পর্কে ধারণা নেওয়া

আপনি যে মার্কেটপ্লেসে কাজ করতে চাচ্ছেন সেই মার্কেটপ্লেস সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা রাখতে হবে। অর্থাৎ ঐ মার্কেটপ্লেসে কোন ধরনের কাজের চাহিদা বেশি,পেমেন্ট মেথড,কাজের প্রক্রিয়া ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। প্রতিটি মার্কেটপ্লেসেরই নিজস্ব কিছু নিয়ম আছে। সে সম্পর্কে অবগত হওয়া উচিত। মার্কেটপ্লেস সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকার পর কাজের জন্য বিড করা উচিত। নতুবা ভোগান্তিতে পড়তে পারেন।

 

স্কিল মেজারমেন্ট পরীক্ষা দেওয়া

প্রায় সকল মার্কেটপ্লেসেই ফ্রিল্যান্সারদের জন্য তাঁদের স্কিল টেস্ট বা মেজারমেন্ট এর ব্যবস্থা রয়েছে। এই পরীক্ষাগুলোতে অংশগ্রহণ করে আপনি আপনার দক্ষতা যাচাই করতে পারেন। এবং এই পরীক্ষাগুলোয় প্রাপ্ত স্কোর আপনার প্রোফাইলে যুক্ত করতে পারেন। এসব পরীক্ষায় ভালো স্কোর থাকলে এবং তা প্রোফাইলে যুক্ত থাকলে আপনার প্রতি বায়ারের আস্থা বেড়ে যাবে। যার ফলে কাজ পেতে সুবিধা হবে। এক্ষেত্রে একটি ব্যাপার মনে খচখচ করতে পারে যে,যদি এসব পরীক্ষায় খারাপ করি তখন? এক্ষেত্রে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। পরীক্ষায় খারাপ করলে সেই ফলাফল লুকিয়েও রাখতে পারবেন। এবং একটি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের দুই সপ্তাহ পর আপনি চাইলে আবার পরীক্ষা দিয়ে নিজের স্কোর ভালো করার চেষ্টা করতে পারেন।

 

অনলাইনে বেশিক্ষণ থাকা

একটি কাজের বিপরীতে অনেকজন প্রতিযোগী থাকে। আপনি যদি বেশি সময় ধরে অনলাইনে থাকেন তবে আপনার আকাঙখিত কাজটি বায়ার সাবমিট করার সাথে সাথেই আবেদন করতে পারবেন। যার ফলে ক্লায়েন্ট এর সাথে দ্রুত যোগাযোগ সম্ভবপর হবে। এবং সেই সাথে অন্য একজন ফ্রিল্যান্সারারের তুলনায় আপনার কাজটি পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে। তাই আপনার আকাঙখিত কাজটি যদি অন্য ফ্রিল্যান্সারারের পরিবর্তে আপনি পেতে চান তবে আপনাকে অন্যের তুলনায় একটু বেশি সময় অনলাইনে থাকতে হবে।

 

আবেদনের পূর্বে কাজ সম্পর্কে বুঝা

কোনো একটি কাজে আবেদন করার পূর্বে কাজের ধরন এবং ক্লায়েন্টের দেওয়া রিকোয়ারমেন্ট ভালভাবে বুঝতে হবে। কোনো একটি কাজের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা থাকলে এবং সে কাজটি সম্পর্কে আপনার বিশেষ পারদর্শীতা থাকলেই কেবল আপনি আবেদন করবেন। যদি বিশ্বাস করেন,যে এই কাজটি যথাযথ ভাবে আপনি সম্পন্ন করতে পারবেন তবেই আবেদন করা উচিত।

 

বায়ার সম্পর্কে রিসার্চ

আপনার পছন্দসই কাজটিতে আবেদন করার পর বায়ারের আগের কাজগুলো সম্পর্কে ধারণা নিন। বায়ারের পূর্বের কাজগুলো দেখার মাধ্যমে কাজটির মূল্য সম্পর্কে ধারণা নিতে পারবেন। তাছাড়া বায়ারের রূচি-পছন্দ অর্থাৎ কাজের ধরণ সম্পর্কে ভালোভাবে ধারণা নিতে পারবেন। যা আপনাকে বায়ারের সাথে যোগাযোগের পূর্বে বায়ারের খেয়াল-মর্জি সম্পর্কে বুঝতে অগ্রিম ধারণা দিবে। যেটি আপনার কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকবে।



 

মূল্য নির্ধারণ

মূল্য নির্ধারণ কোনো একটি কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেকাংশেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মূল্য নির্ধারণে আপনার উপস্থিত বুদ্ধিমত্তা খুব বেশি কাজে দিবে। অনেকসময় আমাদের বদ্ধমূল ধারণা থাকে যে,কম মূল্য চেয়ে আবেদন করলে কাজটি পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকবে। এটা একটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক কম মূল্যে আবেদন করলে বরং বায়ারের আপনাকে নিয়ে নেতিবাচক ধারণা ও তৈরী হতে পারে।আপনি কাজটি সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞ এমনটাও বায়ার ভেবে নিতে পারে। তাই সবসময়ই খেয়াল রাখতে হবে যে,আবেদনের সময় অতিরিক্ত মূল্য ও নির্ধারণ করাও যাবেনা,আবার একেবারে কম মূল্য ও নির্ধারণ করা যাবে না। বায়ারের কাঙখিত মূল্যের কাছাকাছি নির্ধারণ করতে হবে।

 

সময় নির্ধারণ

কোনো একটি কাজ পেলে আপনার দক্ষতা এবং পূর্বের অভিজ্ঞতা দিয়েই ধারণা করতে হবে আপনি কাজটি কত ঘন্টা বা কতদিন বা কত সপ্তাহ এর মধ্যে শেষ করতে পারবেন। এবং সেই অনুযায়ী ই একটি ডেলিভারি টাইম সেট করে দিবেন বায়ারকে। এবং সবসময় খেয়াল রাখবেন যেন নির্ধারিত সময়ের পরে যাতে কাজটি জমা না দিতে হয়।

 

নিখুঁত ভাবে কাজ করা

যে কাজটি পেয়েছেন সে কাজটি আপনার সর্বোচ্চ টা দিয়ে সম্পন্ন করার চেষ্টা করূন। আপনার পক্ষ থেকে যতটা নিখুঁতভাবে কাজটি করা যায় সেভাবেই করূন। কাজ করার সময় খেয়াল রাখবেন যেন ক্লায়েন্টের চাওয়া সম্পূর্ণ পূরণ হয়। এবং কাজটি জমা দেওয়ার পর ক্লায়েন্ট যাতে ত্রুটি খুজে না পায়। বরং আপনার প্রতি সন্তুষ্ট হয়।

 

বায়ারদের সাথে ভাল ব্যবহার

আপনার কাজে নৈপুণ্যতা প্রদর্শনের পাশাপাশি ক্লায়েন্টের সাথে ভালো ব্যবহারও প্রদর্শন করতে হবে। বায়ার আপনার কাজের অগ্রগতি কিংবা কাজ বিষয়ক কোনো কিছু সম্পর্কে জানতে চাইলে দ্রুত রেসপনস করার চেষ্টা করবেন। এবং বায়ারের সাথে যোগাযোগ করার সময় যথাসম্ভব স্মার্ট এবং ভদ্রতার সাথে কথা বলার চেষ্টা করবেন।



 

ফিডব্যাক

পরবর্তী কাজ পাওয়ার জন্য আপনার পূর্ববর্তী ক্লায়েন্টদের দেওয়া ফিডব্যাক গুলো বেশ কাজে আসে। কারণ পূর্ববর্তী বায়ারদের প্রদত্ত ফিডব্যাকের মাধ্যমেই অনেকাংশে বুঝা যায় যে,আপনি কতটা গুরুত্ব কিংবা সাফল্যের সাথে ঐ কাজটি করেছিলেন। অথবা ক্লায়েন্ট আপনার প্রতি সন্তুষ্ট ছিল কিনা। তাই কাজ ডেলিভারি দেওয়ার পর ক্লায়েন্ট কে দিয়ে 5 Star ফিডব্যাক নেওয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন। মনে রাখবেন, ভাল ফিডব্যাক আপনাকে পরবর্তী কাজটি পেতে একধাপ এগিয়ে রাখার নিয়ামক।

উল্লেখিত পদ্ধতিগুলো অনুসরণে যেকোনো অনলাইন মার্কেটপ্লেসে আপনার কাজ পাওয়ার পথ সহজ হয়ে যাবে। এছাড়াও আপনার দরকার প্রচন্ড মানসিক শক্তি এবং ধৈর্য্য। সময়ের সাথে অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা বাড়ানোর চেষ্টা করুন। সেইসঙ্গে নিজের ভিতর কাজ করার স্পৃহাকে বাড়ানোর চেষ্টা করুন। তবেই আপনি নিজেকে একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হিসেবে মার্কেটপ্লেসে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন।

Facebook Comments
Top