You are here
Home > ছাত্রদের জন্য ইনকাম > ছাত্র-শিক্ষক সবাই কেনো ঝুঁকছে ফ্রিল্যান্সিংয়ে?

ছাত্র-শিক্ষক সবাই কেনো ঝুঁকছে ফ্রিল্যান্সিংয়ে?

সবার জন্য ফ্রিল্যান্সিং

 

বাংলাদেশের মত একটি জনবহুল দেশে বেকারত্ব যেন একটি কমন বিষয়। এ দেশে দিন দিন অগণিত ছাত্র-ছাত্রী ডিগ্রি নিয়ে বের হচ্ছে ঠিকই  কিন্তু সবার জন্য কাজের প্ল্যাটফর্ম সরকার এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি। ফলস্বরূপ, এদেশের প্রায় ৪৭% শিক্ষিত জনগন বেকার। করোনা মহামারীর এই সময় টা তে বেকারত্বের সংখ্যা টা যেনো হুহু করে বেড়েই চলেছে। এই সময়টাতে অনার্স পড়ুয়া স্টুডেন্টরাই বেশি ডিপ্রেসড। তাই দিন দিন অনার্স পড়ুয়া স্টুডেন্টদের আত্মহত্যার খবর সোশ্যাল মিডিয়ায় অহরহ চোখে পড়ে।  নিশ্চয়ই সুইসাইড কোনো সমাধান এনে দেয় না। করোনা মহামারীর সময়ে নিজেকে এভাবেই খাপ খাইয়ে চলতে হবে। তাই তো দেশের হাজারো বুদ্ধিমান তরুণ তরুণী তাদের বেকারত্ব ঘুচাতে ফ্রিল্যান্সিং এর দিকে ঝুঁকছে। ফ্রিল্যান্সিং এমন একটি পেশা যেখানে একজন মানুষ তার সৃজনশীল মেধা কে কাজে লাগিয়ে আয় করতে পারে। ফ্রিল্যান্সিং একটি বৃহৎ প্ল্যাটফর্ম। এখানে একজন মানুষ তার পছন্দসই যে কোনো ধরনের কাজ বেছে নিতে পারে। যার ডিজাইনিং এর প্রতি ঝোক সে ওয়েবসাইট ডিজাইনার হতে পারে, যার লেখালেখির প্রতি নেশা সে রাইটার হতে পারে। এক কথায় ফ্রিল্যান্সিং এর প্ল্যাটফর্ম টা বিশাল, কাজের ও রয়েছে বিচিত্র ধরণ। আপনি যেকোনো একটি বেছে নিতে পারেন। তবে যারা “ফ্রিল্যান্সিং”  শব্দটার সাথে খুব বেশি পরিচিত নন, তারা হয়তো ভাবছেন কোথা থেকে কাজ শুরু করবো, কিভাবেই বা কাজ পাবো? চিন্তার কোনো কারণ নেই। আপনি শুরুতেই লোকাল ক্লায়েন্ট দের থেকে কাজ নিতে পারেন তারপর কাজে দক্ষতা বাড়লে নেটিভ ক্লায়েন্ট দের থেকে কাজ নিবেন। কিছু কিছু প্ল্যাটফর্ম আছে যেখান থেকে আপনি কাজ পেতে পারেন। যেমন:

  1. Fiverr.com
  2. Upwork.com
  3. Freelancer.com

এসব মার্কেটপ্লেসে কিভাবে সহজেই কাজ পেতে পারেন জানতে ক্লিক করুনঃ

শুধুমাত্র ফ্রিল্যান্সিং এর দিকে ছাত্র-ছাত্রীরাই ঝুঁকছে না। শিক্ষকেরাও অতিরিক্ত আয়ের আশায় ঝুঁকছে ফ্রিল্যান্সিং এর দিকে। যে কারণে শুধু ছাত্রই নয় শিক্ষকেরাও ঝুঁকছে ফ্রিল্যান্সিং এর দিকে তা নিচে আলোচনা করা হলো।

যে ৫ টি কারণে স্টুডেন্ট অবস্থায় একজন শিক্ষার্থী ফ্রিল্যান্সিং এর দিকে ঝুঁকছে:

ফ্রিল্যান্সিং পেশায় এখন উপচে পড়া ভীড়। দক্ষ অদক্ষ সবাই ফ্রিল্যান্সার হতে ইচ্ছুক। তবে যে যত বেশি দক্ষ সে তত টিকে থাকতে পারে এই প্ল্যাটফর্মে। ছাত্র অবস্থায় একজন শিক্ষার্থীর যে কারণে ফ্রিল্যান্সিং পেশা বেছে নেওয়া উচিত তা নিচে আলোচনা করা হলো।

১.পড়াশোনার পাশাপাশি আয় করতে: আপনি যদি একটি নিম্ন মধ্যবিত্ত কিংবা মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হয়ে থাকেন এবং পড়াশোনার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং করতে চান তাহলে আমি বলবো এটা আপনার খুবই ভালো এবং যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত। আমাদের দেশের প্রায় ৯০% শিক্ষার্থী ১৮ থেকে ২০ বছরের পর তারা নিজেরা ইনকাম করতে চায়। সুকান্ত ভট্টাচার্য তাই তার “১৮ বছর বয়স” কবিতায় যথার্থই বলেছেনঃ “১৮ বছর বয়স স্পর্ধার নেয় মাথা তোলবার ঝুঁকি ” অর্থাৎ এ সময় টা থেকেই একজন শিক্ষার্থী স্বাবলম্বী হতে চায়, নিজ পায়ে দাড়াতে চায়। তাই তারা এ সময় নিজে ইনকাম করতে বিভিন্ন কোচিং সেন্টার এর সাথে যুক্ত হয়। কিন্তু তাতে সময়ের সাথে টাকা টা খুবই সামান্য দেওয়া হয় এবং টাইমিং এর দিকেও নজর দিতে হয়। তাই কেও কেও ফ্রিল্যান্সিং পেশায় যোগ দেয়। ফ্রিল্যান্সিং পেশায় কোনো নির্দিষ্ট ইনকাম নেই। যে যত বেশি দক্ষ তার ইনকাম তত। এবং এখানে টাইমিং এর কোনো বাধা ধরা নিয়ম নেই। যে যার ইচ্ছে মত সময়ে কাজগুলো করতে পারে৷ পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে ফ্রিল্যান্সিং করার সুবিধা অনেক তার মধ্যে যে ২টি সুবিধা না বললেই নয় তা হলো:

  • আপনি দিন কিংবা রাত যখন সময় পাবেন তখনই ফ্রিল্যান্সিং করতে পারবেন, এতে করে আপনার পড়াশোনায় কোনো ইফেক্ট পরবে না। টাইমিং মেইনটেইন এর ভেজাল নেই।
  • আপনি যে কোনো সময় কাজ করা বন্ধ করে দিতে পারেন। আপনার এক্সাম টাইম এ ফোকাস যদি হয় ওনলি পড়াশোনা তাহলে আপনি তখন ফ্রিল্যান্সিং করা বাদ দিতে পারেন। এক্সাম শেষ হওয়ার সাথে সাথে আপনার দক্ষতা অনুযায়ী আপনি কাজ পেয়ে যাবেন। 

২.পরিবার কে ফাইনানশিয়াল সাপোর্ট দিতেঃ ছাত্রাবস্থায় দেশের প্রায় ৯৯% ছেলে-মেয়ে তাদের পরিবার কে ফাইনানশিয়াল সাপোর্ট দিয়ে থাকে। অনার্স এ উঠলেই সবার ভেতরে একটা অন্য রকম অনুভূতি কাজ করে। সেটি হচ্ছে তাকে সেল্ফ ইনডিপেন্ডেন্ট হতে হবে। শুধু অনার্স পড়ুয়া স্টুডেন্টরাই নয় উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের স্টুডেন্টরা ও সেল্ফ ইনডিপেনডেন্ট হতে চায়। আমি নিজেও একজন রাইটার হিসেবে কাজ শুরু করেছি ইন্টার

মিডিয়েট লেভেল থেকে। আমার পরিচিত একজন অনার্স পড়ুয়া ভাই ফ্রিল্যান্সিং করে মাসে লক্ষ্য লক্ষ্য টাকা ইনকাম করছে। এরকম আরও অনেক উদাহরণ রয়েছে। চাইলে আপনিও হতে পারেন এরকম একটি উদাহরণ!

৩.অভিজ্ঞতা ছাড়াই কাজ করার সুযোগ:বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সব কাজেরই পূর্ব অভিজ্ঞতা লাগে কিন্তু ফ্রিল্যান্সিং করতে পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকলেও আপনি কাজ পেয়ে যাবেন। তবে পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকলেও এখানে আপনার দক্ষতা যাচাই করা হবে। আপনি কতটা দক্ষ এবং আপনি কাজের প্রতি কতটা ডেডিকেটেড তা যাচাই করে একজন ফ্রেশার হিসেবে আপনি কাজ পেতে পারেন।

৪.টিউশন এর বিকল্প হিসেবে: মাস্টার্স ডিগ্রী ধারী বেকার যুবক একটা চাকরির জন্য যখন হতাশায় দিন পার করে তখন তার একমাত্র ভরসা হয় টিউশনি। যা দিয়ে সে কোনো মতে চলতে পারবে। কিন্তু করোনার সময় লকডাউন এ কেও যে আর হোম টিউটর রাখতে চায়না। ফলে আবার সেই গোটা বছর ধরে হতাশায় ভোগা। দিনটা কোনো মতে পার হলেও রাত যেনো এক ডিপ্রেশনের কারখানা। এমন অবস্থায় কেও কেও নিজেকে স্বেচ্ছায় নির্বাসন দিয়েছে কেও আবার বেঁচে আছে ঠিকই কিন্তু ভেতরের মানুষ টা মরে গেছে। এরকম হাজারো ডিগ্রি ধারী বেকার যুবকের আশার আলো হতে পারে ফ্রিল্যান্সিং। এখানে কারো কটু কথাও শুনতে হয় না। নিজেই  নিজের বস। আবার কেও কেও স্বাবলম্বী হতে কিংবা শখের বশে নিজে ইনকাম করতে চায়। ১৮ বছর বয়সের পর নিজের খরচ নিজে চালানোর যে প্রবণতা স্টুডেন্টদের ভেতর রয়েছে তা থেকেই তারা টিউশন খোঁজে। কিন্তু কোনো কোনো এলাকায় টিউশনি খুঁজে পাওয়া ও যায় না। অনেক কাঠ খর পুরিয়ে একটি টিউশনি জোগাড় করলেও মাস শেষে দেখা যায় যাতায়াত ভাড়াই ওঠে না। এরকম নানা ধরনের প্রতিকূল অবস্থার সম্মুখীন প্রায় সবাই হয়। তাই টিউশনি এর বিকল্প হিসেবে অনেকেই ফ্রিল্যান্সিং পেশাটা কে বেছে নেয়।

৫.ভবিষৎ এ ফ্রিল্যান্সিংয়ে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে: কেও যদি চায় ভবিষ্যতে নিজেকে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে দেখতে তাহলে আমি মনে করি ছাত্রাবস্থাতেই ফ্রিল্যান্সিং শুরু করে দেওয়া। যাতে করে পড়া শেষ হওয়ার সাথে সাথেই নিজেকে একজন অভিজ্ঞ ফ্রিল্যান্সার হিসেবে পরিচয় দেওয়া যায়। আবার আপনি কোনো আইটি কোম্পানিতে জব করতে চাইলে যদি আগে থেকেই আপনার অভিজ্ঞতা থেকে থাকে ফ্রিল্যান্সিংয়ের উপর তাহলে আপনার জব পাওয়ার পসিবিলিটি ৯০%।

ছাত্রজীবনে টাকা আয় করার সহজ উপায়গুলো কী?

গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা না বললেই নয় তা হলো

অনেকের মনেই যে ভ্রান্ত ধারণা টা থাকে তা হলো ছাত্রাবস্থায় ফ্রিল্যান্সিং করে নিজের ক্যারিয়ার টা নষ্ট করবো নাকি। বাস্তবতার প্রেক্ষিতে বলছি, আপনি আপনার স্টুডেন্ট লাইফে ব্যস্ত থাকুন না হলে শয়তান আপনার মাথায় ভর করবে। আপনার চারপাশে যা ঘটবে আপনিও দিন শেষে তাদের দলেই যোগ দিবেন। আপনার ফ্রেন্ড গেইম, প্রেমিক-প্রেমিকা নিয়ে বিজি আপনার ও মন চাইবে এসব করতে। তাই বলছি নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। আপনার গেম খেললেও অনেক সময় অপচয় হচ্ছে সেই সময় টা আপনি ফ্রিল্যান্সিং করুন। যারা বলে পড়াশোনার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং করা যায় না তাদের বলছি, স্বপ্ন যদি হয় অনেক বড় তাহলে আপনাকে পরিশ্রম করতে হবে। পড়াশোনা করার পাশাপাশি আপনি ফ্রিল্যান্সিং করবেন, পড়াশোনা বাদ দিয়ে নয়। তাতে যদি আপনার দুই ঘন্টা ঘুম কম হয় ক্ষতি কি?

বর্তমানে শিক্ষকরাও যে কারণে ঝুঁকছে ফ্রিল্যান্সিংয়েঃ 

যারা সবসময় ব্যস্ত জীবন কাটিয়েছে তাদের কাছে ব্যস্ততা বিহীন জীবন যেন গলার কাটা। তাই করোনা মহামারীর এই সময়টাতে শিক্ষকরা নিজেদের কে ব্যস্ত রাখতে কেও কেও ফ্রিল্যান্সিং করছে।

বাড়তি আয়ের আশায়: কিছু কিছু শিক্ষক এমনকি অন্যান্য পেশাদাররা ও তাদের বাড়তি আয়ের আশায় ফ্রিল্যান্সিং করছে। দিনে অফিস করে রাতে ফ্রিল্যান্সিং করছে৷ যারা সামান্য আয়ের শিক্ষকতা করে যেমন কিন্ডারগার্টেন স্কুলে চাকরি করে তারা পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং ও করে। কারণ বাচ্চাদের ৩,৪ ঘন্টা ক্লাস করানোর পর সমস্ত দিন টাই পরে থাকে তাই বাকি সময় টা ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য একদম উপযুক্ত।

বাড়তি স্কিল ডেভেলপ করতে : যখন একজন মানুষ ব্যস্ত থাকে তখন সে একটু রিলাক্স এর চিন্তা করে। কিন্তু লকডাউন এ দীর্ঘদিন পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষকদের সময় যেনো আর কাটছেনা। তাই শিক্ষকরা বাড়তি একটা স্কিল ডেভেলপ করতে অথবা ব্যস্ততার ভেতর সময় কাটাতে ফ্রিল্যান্সিং কে বেঁছে নিয়েছে। আবার এতে আরও একটি বড় সুবিধা হলো তারা এক্সট্রা টাকা ইনকাম করতে পারছেন।

মুলত এইসব কারণেই ছাত্র এমনকি শিক্ষকরাও ফ্রিল্যান্সিং করছেন। আশা করা যায়, ফিউচারে হয়তো বাংলাদেশের স্টুডেন্টদের পার্ট-টাইম কাজ করার একটা রেভুলোশন এনে দিবে ফ্রিল্যান্সিং!

Facebook Comments
Top