এন্ড্রয়েড এপস ডেভেলপমেন্ট : স্মার্ট ক্যারিয়ারের নতুন দিগন্ত ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার ফ্রিল্যান্সিং গাইড মার্কেটপ্লেস 0 সময়ের পরিক্রমায় প্রযুক্তির সহজলভ্যতায় প্রতিনিয়ত বাড়ছে স্মার্ট ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা। বর্তমানে সারা বিশ্বে স্মার্ট ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৩ কোটি ৮০ লাখ। এর মধ্যে ৮৫ শতাংশের ও বেশি হচ্ছে এন্ড্রয়েড ডিভাইস ব্যবহারকারী। সর্বস্তরের মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকার দরুণ এর ব্যবহারকারীর সংখ্যাটা অত্যন্ত বেশি। তাই সময়ের সাথে তাল রেখে অনলাইনে প্যাসিভ ইনকাম করতে চাইলে এন্ড্রয়েড এপস ডেভেলপমেন্ট হতে পারে আপনার জন্য স্মার্ট ক্যারিয়ারের নতুন দিগন্ত। আর এই বিষয়টির গভীর পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করাই আমাদের আজকের উদ্দেশ্য। লিনাক্স কার্নেল এবং অন্যান্য ওপেন সোর্স সফটওয়্যারের সংশোধিত সংস্করণের উপর ভিত্তি করে তৈরীকৃত মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম ই হচ্ছে এন্ড্রয়েড। স্মার্টফোন এবং ট্যাবলেট এর মতো টাচস্ক্রিন মোবাইল ডিভাইসগুলো জন্য মূলত এটি ডিজাইন করা হয়। আর এই ডিভাইসগুলো ব্যবহারের সময় আমরা আমাদের প্রয়োজন মতো বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার বা এপ্লিকেশন ব্যবহার করে থাকি। যেমন,বিভিন্ন ধরনের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ (ফেসবুক,টুইটার,ম্যাসেঞ্জার,হোয়াটসএপ,ইমো ইত্যাদি), এছাড়াও ফটো এডিটিং,গেমস ইত্যাদি বিভিন্ন অ্যাপ থেকে শুরু করে অনেক বৈচিত্র্য রকমের অ্যাপ আমরা ব্যবহার করে থাকি। এন্ড্রয়েড ডিভাইসে ব্যবহারযোগ্য এই অ্যাপ গুলোই মূলত এন্ড্রয়েড অ্যাপ। প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজের মাধ্যমে অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপাররা এই অ্যাপ গুলো তৈরী করে থাকেন। আইপি এড্রেস কি? আইপি এড্রেস কতপ্রকার ও কিভাবে কাজ করে? প্রতিনিয়ত এন্ড্রয়েড স্মার্টফোনের ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে বিভিন্ন মানুষের নানাবিধ চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজন পড়ছে বিভিন্ন অ্যাপ এর। তাই কোম্পানিগুলো এন্ড্রয়েড অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট এর দিকে মরিয়া হয়ে ঝুকছে। যার ফলে প্রত্যহ বাড়ছে এন্ড্রয়েড অ্যাপ ডেভেলপার এর চাহিদা। তাই সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় পেশা হয়ে উঠেছে এন্ডয়েড অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট। যোগ্যতা / দক্ষতা আপনার শিক্ষাগত ব্যাকগ্রাউন্ড যাইহোক না কেন প্রোগ্রামিং এ দক্ষতা থাকলে আপনি হতে পারবেন একজন এন্ড্রয়েড এপ ডেভেলপার। সেই সঙ্গে কোনো সমস্যা সমাধানের জন্য আপনার বিশ্লেষণী দক্ষতা ও সৃজনশীলতার প্রয়োজন। একজন এন্ড্রয়েড অ্যাপ ডেভেলপারের যেই দক্ষতাগুলো প্রয়োজনঃ কম্পিউটারের সুষ্ঠু ব্যবহার,কার্যপ্রণালী,গঠন সম্পর্কে পুর্ণাঙ্গ জ্ঞান থাকতে হবে। বিভিন্ন জটিল গানিতিক সমস্যাবলি সমাধান এবং যুক্তি প্রয়োগ করতে জানতে হবে। ডেটাবেজ সিস্টেম,ক্লায়েন্ট সার্ভার,বাইনারী,ডিজিটাল লজিক,অপারেটিং সিস্টেম এসবের খুটিনাটি বিষয় সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা রাখতে হবে। Java, C++, C# কিংবা kotlin ইত্যাদি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ এ বিশেষ দক্ষতা আনতে হবে। Java এবং kotlin দুইটাই অফিসয়াল ল্যাঙ্গুয়েজ।যেকোনো একটি দিয়ে কাজ করলেই হয়।তবে Java ল্যাঙ্গুয়েজে দক্ষতা থাকা উত্তম। এছাড়াও CSS,HTML,JavaScript ইত্যাদি ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ল্যাঙ্গুয়েজ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা রাখতে হবে। এন্ড্রয়েড ডিভাইসের অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস সম্পর্কে জানা জরুরি। এবং গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেস ডিজাইন ও জানা প্রয়োজন। এছাড়াও বিভিন্ন ভেরিয়েবল, অ্যারে, লুপ, অপারেটর, স্টেটমেন্ট, কন্ডিশন, ইটারেটর, মেমোরি ম্যানেজমেন্ট, ফাইল অপারেশন, বিএফএস, ডিএফএস ইত্যাদি সম্পর্কে বিশেষ ধারণা থাকতে হবে। এছাড়াও আপনার প্রয়োজন প্রবল ধৈর্য, ইচ্ছাশক্তি, সৃজনশীলতা, কাজের প্রতি একাগ্রতা ও আগ্রহ। কাজ শেখার উপায় আপনি যদি একজন এন্ড্রয়েড অ্যাপ ডেভেলপার হতে চান প্রথমেই আপনার যে জিনিষটা থাকা দরকার তা হলো আপনার ধৈর্য্য। এবং সেইসাথে আপনার ভিতর থাকতে হবে শেখার আগ্রহ। একজন ভালো এন্ড্রয়েড অ্যাপ ডেভেলপার হওয়ার ক্ষেত্রে মেন্টর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এক্ষেত্রে আপনি যেকোনো ট্রেইনিং সেন্টারের ও দ্বারস্থ হতে পারবেন। তবে খেয়াল রাখবেন যেন ট্রেইনিং সেন্টারে প্রতারণার শিকার না হন।এছাড়া ও আপনি ইউটিউবে কিংবা অনলাইনে বিভিন্ন কোর্স এর মাধ্যমে এন্ড্রয়েড অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট শিখতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনি কিছু ইউটিউব চ্যানেলের ভিডিও অনুসরণ করতে পারেন। যেমন, CodeTutor The New Boston Reso Coder Sidehart Coding In Flow Udacity Goober Coding with Mitch এন্ড্রয়েড অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট এর খুটিনাটি বিষয় সূক্ষ্মভাবে জানতে বই অনেক সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এক্ষেত্রে কিছু বই ও আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী অনুসরণ করতে পারেন।যেমন, Android App Development for Dummies Head First Android Development Android Cookbook Android Studio 3.0 Development Essential এছাড়াও আপনার যেই বিষয়টিতে দক্ষতা অর্জন প্রয়োজন সেই বিষয়ক সেরা বইগুলো দেখতে পারেন। তাছাড়া বিভিন্ন রিসোর্স যেমন, ব্লগ, জার্নাল ইত্যাদি থেকে আপনি এন্ড্রয়েড অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়াধি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নিতে পারেন। কাজের ক্ষেত্র এন্ড্রয়েড অ্যাপ ডেভেলপারদের কর্মক্ষেত্র বর্তমানে অনেক বিস্তৃত। এন্ড্রয়েড অ্যাপের চাহিদা বেশি থাকায় বিভিন্ন সফটওয়্যার কিংবা ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির প্রয়োজন পড়ছে এন্ড্রয়েড অ্যাপ ডেভেলপারের। তাই এন্ড্রয়েড অ্যাপ ডেভেলপাররা এসব সফটওয়্যার কিংবা ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কোম্পানিতে বেশ ভাল বেতনে চাকরি করতে পারেন। বিভিন্ন জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেস যেমন, upwork,fiverr ইত্যাদি সহ যে কোনো মার্কেটপ্লেসে ফ্রিল্যান্সার হিসেবেও এন্ড্রয়েড অ্যাপ ডেভেলপারের চাহিদা প্রচুর। এক্ষেত্রে নিজের স্বাধীন ইচ্ছা অনুযায়ী ও পছন্দসই কাজ করতে পারে। এছাড়াও যে কোনো এন্ড্রয়েড অ্যাপ ডেভেলপার চাইলে নিজের তৈরী অ্যাপ থেকেই আয় করতে পারে। যে কোনো একটি অ্যাপ ডেভেলপ করে প্লে স্টোরে আপলোড করলে সেখান থেকেও আয় হতে পারে। যদি তৈরীকৃত অ্যাপটির ব্যবহারকারীর সংখ্যা তুমুল হয় এবং অ্যাপটির চাহিদা বেশি হয় তবে সেখান থেকে প্রচুর পরিমাণ অর্থ উপার্জন করতে পারে। আয়ের ধরন এন্ড্রয়েড অ্যাপ ডেভেলপারদের মাসিক ইনকাম তাঁদের যোগ্যতা অনুযায়ী বিভিন্ন হয়ে থাকে। বর্তমানে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে একজন এন্ড্রয়েড অ্যাপ ডেভেলপারের বেতন বিশ হাজার কিংবা তার অধিক হতে পারে। বিভিন্ন কোম্পানি কিংবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে একজন এন্ড্রয়েড অ্যাপ ডেভেলপারের বেতন ত্রিশ হাজার থেকে শুরু করে কয়েক লাখ পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়াও অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোতে একজন দক্ষ এন্ড্রয়েড অ্যাপ ডেভেলপার কাজের ধরন ও চাহিদা অনুযায়ী মাসে কয়েক লাখ টাকাও ইনকাম করতে পারেন। অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোতে একজন এন্ড্রয়েড অ্যাপ ডেভেলপার প্রতি ঘন্টায় ২৫ থেকে ৫০ ডলার চুক্তিতেও কাজ করে থাকেন। তাই বলা যায়, আপনার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা যত বেশি হবে আপনার আয় তত বাড়বে। ভবিষ্যত এন্ড্রয়েড অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট এর বেশিরভাগই হয়ে থাকে আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে। আর এই কাজ গুলো করার ক্ষেত্রে উন্নত দেশের কোম্পানীগুলোর সুনজরে রয়েছে বাংলাদেশী ফ্রিল্যান্সাররা। কারণ,তুলনামূলক কম ব্যায়ে এসব কোম্পানিগুলো আমাদের দেশীয় ফ্রিল্যান্সার দিয়ে কাজ করাতে পারেন। তাই এন্ড্রয়েড অ্যাপ ডেভেলপারদের চাহিদা ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলোতে প্রচুর। এছাড়াও প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ই–কমার্স সাইট গড়ে উঠছে। এক্ষেত্রে ই–কমার্স গুলোর প্রয়োজন পড়ছে অ্যাপ এর। এসব ই–কমার্স এর পরিধি বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে এন্ড্রয়েড অ্যাপ ডেভেলপারের চাহিদা। তাই ভবিষ্যতের কথা বিবেচনায় বলা যায়, এন্ড্রয়েড অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট এ রয়েছে উজ্জ্বল ক্যারিয়ারের হাতছানি। পরিশেষে আপনার ধৈর্য এবং দক্ষতার সংমিশ্রণে একজন সফল এন্ড্রয়েড অ্যাপ ডেভেলপার হয়ে একদিকে যেমন নিজেকে স্বাবলম্বী করে তুলতে পারেন। ঠিক তেমনি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। Facebook Comments Share on TwitterTweet Share on Pinterest Share Share on LinkedIn Share Share on Digg Share