সময়ের পরিবর্তনে ঘরে বসে অনলাইনে আয় করার দিকে প্রতিনিয়ত বাড়ছে বিভিন্ন বয়সী মানুষের ঝোক। শিক্ষার্থী হোক কিংবা চাকুরীজীবি প্রায় বেশিরভাগ মানুষই এখন অনলাইন থেকে দীর্ঘস্থায়ী উপার্জনের পথ খুঁজছেন। কিন্তু হাতেগোনা খুব কম সংখ্যক লোকই সন্ধান পাচ্ছেন সঠিক পথের এবং দেখতে পারছেন সফলতার মুখ। তবে চিন্তার কারণ নেই একটু কৌশলী এবং সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিলে আপনিও খুঁজে পেতে পারেন অনলাইন থেকে দীর্ঘস্থায়ী আয়ের পথ। বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় ব্লগ লিখা স্থিতিশীল এবং দীর্ঘস্থায়ী উপার্জনের অন্যতম একটি ক্ষেত্র।
তথ্যপ্রযুক্তির এই উৎকর্ষতার যুগে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর প্রায় ৭৭ শতাংশই বিভিন্ন ব্লগের লিখা পড়ে থাকেন। আজকাল বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বিভিন্ন মানুষ তাঁদের প্রয়োজনীয় যেকোনো তথ্য গুগলে অনুসন্ধান করে থাকেন। তাঁরা বিভিন্ন ব্লগে ঘুরে তাঁদের দরকারী তথ্য খুঁজে বের করে কিংবা বিভিন্ন ব্লগের লিখাগুলো পড়ে অবসর সময়ও কাটায়। আর এই এত সংখ্যক মানুষের আনাগোনার কারণে ব্লগ হয়ে উঠেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য কাঙ্ক্ষিত গ্রাহক পাওয়ার মাধ্যম।
যার ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো এই ব্লগ গুলোতে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে আর তাতে লাভবান হয় বিভিন্ন ব্লগের লেখকরাও। আপনার যদি লেখালেখিতে বিশেষ ঝোক থাকে এবং আপনি যদি লেখালেখিতে মোটামুটি পারদর্শী হন তবে ব্লগ লিখে দীর্ঘস্থায়ী আয়ের পথ খুলতে পারেন আপনিও।
ক্যারিয়ার হিসাবে ফ্রিল্যান্সিং শুরুর আগে যা জানতে হবে!
তাহলে জেনে নেওয়া যাক, ব্লগ লিখে কিভাবে আপনি খুব সহজেই দীর্ঘস্থায়ীভাবে আয় করতে পারবেনঃ
লেখার ক্ষেত্র নির্ধারণ
ব্লগ লিখে অর্থ উপার্জন করতে চাইলে প্রথমেই আপনাকে আপনার লেখার দিকে মনোযোগী হতে হবে। অর্থাৎ আপনার লেখার ধরন যত ভাল হবে পাঠকরা পড়তে তত বেশি আগ্রহী হবে। তাই আপনাকে অবশ্যই আপনার লেখার ধরনে নিজস্বতা এবং বৈচিত্র্যতা আনতে হবে। কোনো একটি বিষয়কে সৃজনশীলতার মিশ্রণে সহজ এবং প্রাণবন্ত ভাষার ব্যবহারে মাধ্যমে উপস্থাপন করার দক্ষতা আপনাকে অর্জন করতে হবে। লেখার ভিতর খুব বেশি কাঠখোট্টা শব্দের ব্যবহার, ভুল বানান কিংবা গুরুচন্ডালী দোষ অর্থাৎ সাধু – চলিত রীতির মিশ্রণ পরিহার করতে হবে। সহজ এবং অর্থবহুল শব্দের প্রয়োগে ছোট ছোট বাক্যে লেখাগুলো উপস্থাপন করতে হবে।
আর আপনি কোন ধরনের বিষয়াদি নিয়ে ব্লগ লিখবেন সেটাও প্রথমে নির্ধারণ করতে হবে। আপনার দক্ষতা এবং আগ্রহের ক্ষেত্র অনুযায়ী ব্লগের লেখার ক্ষেত্র বাছাই করতে পারেন। এক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি, খেলাধূলা, কৃষি, ফ্রিল্যান্সিং গাইডলাইন, প্রোগ্রামিং, ডিজিটাল মার্কেটিং, পণ্য রিভিউ কিংবা অন্যান্য যেকোনো ক্ষেত্রের মধ্যে যেকোনো একটি ক্ষেত্র বাছাই করবেন। অর্থাৎ আপনি যেকোনো একটি ক্ষেত্র নির্বাচন করে ঐ সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আপনার ব্লগে লেখালেখি করবেন। তাই ব্লগের বিষয়বস্তু নির্বাচনে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে এবং ঐ জাতীয় লেখার চাহিদা বিশ্লেষণ করতে হবে।
আপনার লেখালেখির ক্ষেত্র নির্বাচনের পর ঐ সংক্রান্ত বিভিন্ন খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে গবেষণা, পড়ালেখা চালিয়ে যেতে হবে। এবং ঐ ক্ষেত্রটিতে যোগ হওয়া বিভিন্ন নতুন নতুন তথ্যাদি সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। এজন্য আপনি আপনার নির্দিষ্ট ক্ষেত্রের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বই পড়তে পারেন কিংবা সংবাদপত্র বা বিভিন্ন ব্লগের আর্টিকেল পড়তে পারেন। পর্যাপ্ত গবেষণা করে কোনো একটি বিষয় নিয়ে লিখতে হবে যেন প্রয়োজনীয় সকল তথ্য একজন পাঠক খুব সহজ এবং সাবলীলভাবে আপনার লেখার মধ্যে খুঁজে পায়। এবং আপনার নির্বাচিত ক্ষেত্র সংক্রান্ত অনেক বেশি পরিমাণ আর্টিকেল লিখে আপনার ব্লগের যাত্রা শুরু করবেন যেন আপনার ব্লগটি কিছুটা হলেও স্বয়ংসম্পূর্ণ থাকে।
আকর্ষণীয় ব্লগ তৈরী
আপনার ব্লগের লেখালেখির ক্ষেত্র নির্ধারণের পর আপনাকে একটি সুন্দর এবং আকর্ষণীয় ব্লগ তৈরীর দিকে মনোযোগী হতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি যদি প্রোগ্রামিং এ মোটামুটি দক্ষ হন তবে আপনি নিজেই আপনার ব্লগটি তৈরি করে নিতে পারেন। নতুবা আপনি কোনো প্রোগ্রামারের মাধ্যমে আপনার ব্লগটি তৈরী করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনি কোনো ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস থেকে কোনো ওয়েব ডেভেলপারের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে আপনার ব্লগটি তৈরি করিয়ে নিতে পারেন। এছাড়াও আপনি কোনো ধরনের অর্থ ব্যয় ব্যতীতই Blogger.Com কিংবা WordPress.Com সহ এরকম অন্যান্য প্ল্যাটফর্ম থেকে আপনার ব্লগটি তৈরি করতে পারেন। তবে ফ্রি ব্লগ গুলোতে অনেক সীমাবদ্ধতা থাকে যা আপনার জন্য কিছুটা ঝামেলাপূর্ণ। তবে সবচেয়ে ভাল হয় আপনি যদি কোনো ওয়েব ডেভেলপার এবং ডিজাইনারকে দিয়ে ব্লগ টি তৈরী করেন। আর আপনার ব্লগের ধরন অনুযায়ী অর্থা আপনার কন্টেন্টের কথা বিবেচনায় রেখে ব্লগের লেয়াউট, মেন্যু, সাইডবার, তথ্য, ছবি ইত্যাদি সুন্দরভাবে বিন্যস্ত করে সাজাবেন।
আপনার ব্লগটি পুরোপুরিভাবে তৈরী হয়ে গেলে ব্লগটিতে আপনার লেখা কন্টেন্ট গুলো সুন্দরভাবে উপস্থাপন করবেন। এমনভাবে কন্টেন্ট গুলো সাজাবেন যেন কোন একজন ভিজিটর আপনার ব্লগটিতে অন্যান্য লেখাগুলো খুব সহজে খুঁজে পায়। শুরুর দিকে ভিজিটর পাওয়াটা তুলনামূলক কষ্টসাধ্য। তাই যেকোনো লেখাতেই সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন ঠিকভাবে করতে হবে।যেন কোনো একটি নির্দিষ্ট সার্চে আপনার ব্লগটি অন্যান্য ব্লগগুলোকে পিছনে ফেলে সামনে চলে আসে।কারণ কোনো একটি নির্দিষ্ট সার্চে আপনার ব্লগটি যত উপরে থাকবে আপনার ভিজিটরের সংখ্যাও তত বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও আপনি গুগল এডওয়ার্ডস এর মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়েও ভিজিটরের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারেন।এক্ষেত্রে আপনাকে একটি নির্দিষ্ট কি-ওয়ার্ড এর জন্য বিডিং করতে হবে। ফলে ঐ নির্দিষ্ট কি-ওয়ার্ড সার্চে আপনার ব্লগটিকে আগে প্রদর্শন করবে।এভাবে আলোচ্য পদ্ধতি গুলো অনুসরণ করে চেষ্টা করতে হবে যত বেশি ভিজিটর আনা যায়।
বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্ক
সময়ের পরিবর্তনের সাথে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুলোর প্রচারণার ধরনেও এসেছে ভিন্নতা। আগে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান টেলিভিশন কিংবা সড়কে বিলবোর্ড ইত্যাদির মাধ্যমে প্রচারণা চালাতো। কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে তাঁরা শুধু টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন দেখানো কিংবা সড়কে বিলবোর্ড বসিয়ে প্রচারণার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এখন প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য তাঁরা খুব বেশি পরিমাণ অনলাইন ভিত্তিক প্রচারণায় ঝুকছে। তাই ফেসবুক, ইউটিউব কিংবা গুগল ইত্যাদি অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে তাঁদের পণ্যের প্রচারণা চালাচ্ছে।
আর আপনার ব্লগ থেকে আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস হল এই বিজ্ঞাপন। অর্থাৎ আপনার ব্লগে প্রদর্শিত বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আপনি আয় করে নিতে পারবেন। গুগল মূলত গুগল এডসেন্সের মাধ্যমে আপনার ব্লগে কিছু বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে থাকবে। এবং সেই প্রদর্শিত বিজ্ঞাপনে ভিজিটরদের প্রতি ক্লিক থেকে আপনার ০.০১ ডলার থেকে ৫০ ইউএস ডলার পর্যন্ত আয় হতে পারে।
এক্ষেত্রে প্রথমে আপনাকে গুগল এডসেন্সের নিকট ব্যাঙ্ক একাউন্ট উল্লেখ পূর্বক আপনার ব্লগে বিজ্ঞাপন পরিবেশন করার জন্য আবেদন করতে হবে। আপনার ব্লগ কে যাচাই করে বিজ্ঞাপন পরিবেশনের উপযোগী মনে হলে গুগল এডসেন্সের পক্ষ থেকে আপনাকে একটি মেইল পাঠানো হবে। এবং গুগল এডসেন্স আপনার মনিটাইজেশন চালু করে দিবে।
অতঃপর গুগল এডসেন্স থেকে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন কোড পাঠানো হবে। সেই কোড অনুযায়ী নির্ধারিত বিজ্ঞাপনটি আপনার ব্লগে প্রদর্শন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনি আপনার ব্লগের হেডার, সাইটবার, ফুটার কিংবা লেখার মাঝে কোডটিকে বসাতে পারেন। এভাবে আপনি বিজ্ঞাপনটির কোড ঠিকঠাক স্থানে রাখার পর গুগল এডসেন্সের পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনটি আপনার ব্লগে প্রদর্শন করা হবে।
তবে এই বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের স্থান নির্ধারণের সময় খেয়াল রাখবেন যেট এটি বেশি সংখ্যক ভিজিটরের চোখে পড়ে। বিজ্ঞাপনটি যখন বেশি সংখ্যক ভিজিটরের নজরে পড়বে তখন বিজ্ঞাপনটিতে ক্লিক করার হারও বেড়ে যাবে। আর যত বেশিগুণ ক্লিক পড়বে আপনার আয়ের পরিমাণ তত বেশিগুণ বেড়ে যাবে। গুগল এডসেন্স ছাড়াও আপনি BidVertiser কিংবা ঈনফলিনক্স ইত্যাদির মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করাতে পারেন।
সরাসরি বিজ্ঞাপন প্রদর্শন
গুগল নির্ধারিত বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি আপনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন আপনার ব্লগের মাধ্যমে প্রচার করেও ভাল পরিমাণ অর্থ আয় করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনার ব্লগে বেশ ভাল পরিমাণ ভিজিটর থাকলে আশা করা যায় আপনার আয়ের পরিমাণ ও বেশ ভাল হবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আপনি এই সকল প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দাতাদের সাথে কিভাবে যোগাযোগ করে আপনার ব্লগে বিজ্ঞাপন দেওয়াবেন। এক্ষেত্রে আপনি একটু গবেষণা কিংবা খোঁজ করে কিছু প্রতিষ্ঠানের তালিকা সংগ্রহ করুন। যারা এসব ব্লগে বিজ্ঞাপন দিতে আগ্রহী।
মূলত বর্তমানে প্রায় সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই অবশ্য ব্লগের মাধ্যমেও বিজ্ঞাপন প্রদর্শনে আগ্রহী। কারণ এতে কম খরচে, বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে পৌছানো যায়। তো এক্ষেত্রে আপনি আপনার ব্লগের ধরন অনুযায়ী উপযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা সংগ্রহ করবেন। অর্থাৎ যেই প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন গুলো আপনার ব্লগের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিংবা আপনার অডিয়েন্সদের কাছে ঐ প্রতিষ্ঠানটি বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে লাভবান হতে পারে এসব দিক বিবেচনায় আনবেন। অতঃপর ঐ প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে আপনি সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন। এছাড়াও ফোন কিংবা ইমেইলে তাদের এই ব্যপারে বিস্তারিত জানাতে পারেন। এবং তারা যদি আপনার ব্লগে বিজ্ঞাপন প্রদর্শনে আগ্রহ দেখায় তখন মূল্য সংক্রান্ত ব্যাপারগুলো ও আলোচনা করে নিবেন।
এছাড়াও আপনার ইমেইল কিংবা ফোন নাম্বার সহ আপনার ব্লগে বিজ্ঞাপন দেখাতে হলে প্রয়োজনীয় বিষয়াদি আপনার ব্লগের কোনো অংশে কিংবা কোনো পেজে উল্লেখ করে দিতে পারেন। আপনার উল্লেখিত বিষয়ের মধ্যে আপনার লেখার বিষয়বস্ত, ভিজিটর, মূল্য ইত্যাদি উল্লেখ করে দিতে পারেন।
কোনো একটি বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের সময় কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে। অর্থাৎ বিজ্ঞাপনটি আপনার ব্লগের কোন অংশে প্রদর্শন করবেন সে ব্যাপারটি, মূল্য কিংবা আপনার ব্লগের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সিদ্ধান্ত নিবেন। যেমন আপনি ব্লগের হেডার, সাইডবার, ফুটার কিংবা লেখার যে কোনো অংশে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করতে পারবেন। কিন্তু হেডারে প্রদর্শিত বিজ্ঞাপনটি মূলত বেশি রিচ পায়, তাই এখানে প্রদর্শিত বিজ্ঞাপনের জন্য বেশি মূল্য নির্ধারণ করবেন। এছাড়াও যদি আপনার ব্লগে প্রদর্শিত বিজ্ঞাপনে কেউ ক্লিক করে, সেই ক্লিক প্রতি রেট হিসাবেও আয় করতে পারেন।
নিজস্ব সেবা বা পণ্য বিক্রয়
আপনার ব্লগ সাইটটি থেকে আপনার নিজস্ব সেবা বা পণ্য বিক্রয়ের মাধ্যমেও কিন্তু ভাল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করতে পারেন। আপনার সেবা বা পণ্যের গ্রহণযোগ্যতা কিংবা কোন ধরনের পণ্য আপনি আপনার ব্লগ সাইটের মাধ্যমে বিক্রি করতে চাচ্ছেন সে সব বিষয় যাচাই করে আপনি ঐ পণ্য বা সেবা আপনার ব্লগে প্রদর্শন করতে পারেন। অর্থাৎকোনো একটি পণ্য বা সেবা প্রদর্শনের পূর্বে অবশ্যই সেই সেবা বা পণ্যের মূল্য নির্ধারণ, কাঙ্ক্ষিত গ্রাহকদের রূচি, বিক্রয় কৌশল এসব বিষয় আপনার নখদর্পনে রাখতে হবে। আর আপনি কোন ধরনের সেবা বা পণ্য বিক্রি করবেন এটা সম্পূর্ণ আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবে খেয়াল রাখবেন যেন সেবা বা পণ্যটির বৈধতা থাকে এবং ঐ সেবা বা পণ্যের গুণগত মান যাতে খুব ভাল হয়।
এক্ষেত্রে আপনি অডিয়েন্সের কাছে যে কোনো ধরনের পরিষেবাদির উপস্থাপন কিংবা প্রদর্শন করতে পারেন। অর্থাৎ আপনি আপনার দক্ষতার ক্ষেত্র অনুযায়ী ঐ ধরনের সেবার প্রদর্শন করতে পারেন। যেমন, আপনি যদি ভিডিও এডিটিং এ পারদর্শী হন তবে নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে ভিডিও এডিটিং করে দেবার প্রস্তাব দিতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনার ব্লগ সাইটে ভিজিটরদের মধ্যে কারো যদি এই ধরনের সেবার প্রয়োজন হয় তবে সে এই সেবাটি নিয়ে থাকবে। যার ফলে আনপনার অর্থ আয়ের একটি পথ খুলে যাবে। এছাড়াও আপনি চাইলে এই ভিডিও এডিটিং এরই অনলাইন কোর্স বানিয়ে বিক্রি করতে পারেন। আপনার ভিজিটরের মধ্যে যার এই ধরনের কিছু শেখার আগ্রহ আছে সে এটি কিনে নিবে। মূলত ভিডিও এডিটিং কেই এখানে শুধু উদাহরণ হিসেবে দেখানো হয়েছে। এছাড়াও ফটোগ্রাফি, গ্রাফিএক্স ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট আপনার যে ক্ষেত্রেই দক্ষতা থাকুক না কেন একটু কৌশলী হলে আপনার ব্লগসাইট থেকে সেই ক্ষেত্রটিকে পুঁজি করে আয় করে নিতে পারেন।
এছাড়াও বিভিন্ন পণ্য যেমন ইলেকট্রনিক গ্যাজেট থেকে শুরু করে বই সব কিছুই আপনি আপনার ব্লগের মাধ্যমে আকর্ষণীয় ভাবে প্রদর্শন করে বিক্রি করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনার পণ্য বা সেবার বিভিন্ন দিক যেমন, গুণগত মান, কার্যকারীতা, মূল্য, পেমেন্ট মেথড, ডেলিভারি পদ্ধতি সহ যোগাযোগের মাধ্যম ইত্যাদি উল্লেখ করে আপনার ব্লগে একটি ল্যান্ডিং পেইজ যোগ করে দিন। সর্বোপরি আপনি যদি ভাল পণ্য এবং নির্ভর যোগ্য সেবা প্রদান করেন তবেই আপনি এই পদ্ধতির সঠিক প্রয়োগ করে ভাল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।
ব্লগের মাধ্যমে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হচ্ছে কোনো বিক্রেতার পণ্য বা সেবা যেকোনো অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক বহির্ভূত ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিক্রির প্রক্রিয়া। এক্ষেত্রে কোনো একটি প্রতিষ্ঠানের পণ্য বা সেবা যদি আপনার ব্লগের মাধ্যমে বিক্রি হয় তবে ঐ প্রতিষ্ঠান বিনিময়ে আপনাকে ঐ বিক্রিত পণ্যের একটি লভ্যাংশ দিয়ে থাকবেন। তাই বুঝতেই পারছেন একটু কৌশলী এবং উদ্যমী হলে আপনার ব্লগের মাধ্যমে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করেও বেশ ভাল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে আপনার ব্লগের ভিজিটর কারা এবং তাঁদের চাহিদা কিংবা আগ্রহের ক্ষেত্রটি কি এ বিষয় প্রথমে যাচাই করে নিতে হবে। অতঃপর আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনি কোন ধরনের পণ্য বা পরিষেবা আপনার ব্লগের মাধ্যমে বিক্রি করবেন।
এক্ষেত্রে আপনি কোনো অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক এর সাথে সংযুক্ত হতে পারেন। বহুল প্রচলিত কয়েকটি অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্কিং হলো Amazon, FlipCart, Clickbank, Trootrac media ইত্যাদি। এছাড়াও আরো অসংখ্য অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক রয়েছে। আপনার পছন্দ এবং সুবিধামতো যেকোনো একটি অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক কে বেছে নিন। অতঃপর আপনাকে আপনার বাছাইকৃত অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক কিংবা কোম্পানিটির ওয়েবসাইটে গিয়ে নির্ধারিত আবেদনপত্রটি পূরণ করতে হবে। আপনার আবেদনপত্রটি যদি গৃহীত হয় তবে মেইলের মাধ্যমে আপনাকে জানিয়ে দিবে তারা।
আপনাকে সম্মতি প্রদর্শন করলে আপনি তখন ঐ অ্যাফিলিয়েট অ্যাকাউন্ট টিতে লগ ইন করতে পারবেন। অতঃপর আপনার ব্লগের ধরন এবং ভিজিটরদের কথা মাথায় লেখে উপযুক্ত পণ্যটি সেখান থেকে বাছাই করে নিবেন। এরপর সেই পণ্যের লিংক কিংবা বিজ্ঞাপন আপনার ব্লগের যেকোনো স্থানে যোগ করে নিবেন। এখন আপনার ব্লগের কোনো ভিজিটর যদি ঐ লিংকে প্রবেশ করে পণ্যটি ক্রয় করে তবে সেখান থেকে লভ্যাংশের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ আপনি পেয়ে থাকবেন। একেকধরনের পণ্য কিংবা প্রতিষ্ঠানভেদে এই লভ্যাংশের পরিমাণ ভিন্ন হয়ে থাকে।
পরিশেষে আলোচ্য খুঁটিনাটি বিষয়গুলো সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের মাধ্যমে দীর্ঘস্থায়ী এবং স্থিতিশীল আয়ের পথ খুঁজে নিতে পারেন আপনিও। লেখার গুণগত মান বজায় রেখে সার্বিক ব্যাপারগুলো ভালোভাবে বিবেচনায় এনে ব্লগ লিখে আর্থিকভাবে স্বচ্ছলতা অর্জন করুন। সর্বোপরি প্রতিনিয়ত বিভিন্ন লেখায় সংশোধন কিংবা নতুন নতুন বিষয় নিয়ে লেখালেখির মাধ্যমে ঝামেলাহীন ভাবে অর্থ উপার্জন করতে থাকুন।