বর্তমান যুগ তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। তথ্যপ্রযুক্তির চরম উৎকর্ষতার এই যুগে কম্পিউটারের ব্যবহার প্রায় সর্বক্ষেত্রেই বিস্তৃত। আর এই তথ্যপ্রযুক্তির বদৌলতে কম্পিউটারের মাধ্যমে ঘরে বসে ফ্রিল্যান্সিং করে অর্থ উপার্জন করে স্বনির্ভরও হচ্ছে অনেকে। তাই আপনার ও যদি এরকম ঘরে বসে অর্থ উপার্জনের আগ্রহ থেকে থাকে এবং আপনিও যদি একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হিসেবে নিজেকে তালিকাভুক্ত করতে চান, তবে আপনাকেও কম্পিউটার ব্যবহারে পারদর্শী হতে হবে। আপনাকে আয়ত্ত্ব করতে হবে অন্তত বেসিক কম্পিউটার জ্ঞান, জানতে হবে কম্পিউটার বিভিন্ন ট্যুলস এর ব্যবহার।
তাহলে জেনে নেওয়া যাক, একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আপনার কম্পিউটারের কোন কোন ব্যসিক ধারণা গুলো জানা প্রয়োজনঃ
ফ্রিল্যান্সিং শুরুর আগে আর যে,যে, বিষয়গুলো আপনার জানা জরুরী সেসব সম্পর্কে ধারনা পেতে আপনি আমাদের ওয়েবসাইটের অন্যান পোষ্টগুলো পড়ে নিতে পারেন।
ফ্রিল্যান্সিং কি? ক্যারিয়ার হিসাবে ফ্রিল্যান্সিং শুরুর আগে যা জানতে হবে!
কম্পিউটারের যাবতীয় সমস্যার সমাধান
একজন ফ্রিল্যান্সারের সার্বক্ষণিক কাজই কিন্তু কম্পিউটার কেন্দ্রিক। অর্থাৎ কোনো প্রজেক্টের জন্য বিড করা থেকে শুরু করে প্রজেক্ট টি তৈরী করে ক্লায়েন্টের নিকট জমা দেওয়া পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়াটাই কিন্তু কম্পিউটার নির্ভর। এক্ষেত্রে কাজটি সম্পন্ন করার পুরো মাধ্যমটিই যেহেতু কম্পিউটার, তাই এর পরিচর্যা করা ও কিন্তু খুব জরুরি।
কারণ আপনার এই কম্পিউটারে যদি কোনো ধরনের সমস্যা হয় তবে কিন্তু আপনার কাজটি স্থগিত হয়ে যাবে। কিংবা কাজটি আপনি সঠিক সময়ে ক্লায়েন্টের নিকট প্রদান করতে পারবেন না। যা আপনার ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারের জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। যেহেতু যেকোনো ধরনের প্রজেক্টেই ক্লায়েন্ট সন্তুষ্টি প্রধান বিবেচ্য বিষয়, সেক্ষেত্রে ক্লায়েন্ট যদি সঠিক সময়ে কোনো একটি প্রজেক্ট না পায় তবে পরবর্তীতে আপনাকে দিয়ে কাজ করানোর সম্ভাবনা কিন্তু কমে যাবে।
তাই এক্ষেত্রে আপনার কম্পিউটারের ব্যসিক হার্ডওয়্যার সম্পর্কে টুকটাক ধারণা থাকা জরুরি। অর্থাৎ কম্পিউটারের টুকটাক পার্টসে সমস্যা কিংবা অন্যান্য ব্যাসিক সমস্যার সমাধান যেন আপনিই দিতে পারেন। কারণ এর ফলে আপনাকে কম্পিউটারের খুটিনাটি কোনো সমস্যার জন্য কম্পিউটার সার্ভিসিং সেন্টারে নিয়ে সময় এবং অর্থ অপচয় করা লাগবে নাহ।
এছাড়াও আপনাকে কম্পিউটারটির প্রতি যত্নশীল হতে হবে। আপনার কম্পিউটারটির সিপিউ, মাউস, মনিটর, কি-বোর্ড ইত্যাদিকে ধূলা-বালি মুক্ত রাখতে হবে। কারণ ধূলা-ময়লা কম্পিউটারের জন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর। তাই এগুলো সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে। এছাড়াও মাউসের নিচে প্যাড ব্যবহার করবেন। এবং কি-বোর্ড এর উপরে পাতলা কভার ব্যবহার করবেন। সর্বোপরি আপনার কম্পিউটারকে ভাইরাস, স্প্যাম কিংবা যেকোনো ক্ষতিকারক প্রোগ্রামের হাত থেকে রক্ষা করার ব্যাপারে সর্বদা সচেষ্ট থাকতে হবে।
ডকুমেন্ট তৈরী
যেকোনো ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করতে চাইলে প্রথমেই সেখানে আপনার একটি সিভি তথা বায়োডেটা প্রদান করতে হবে৷ কোনো একটি নির্দিষ্ট প্রজেক্টে বিডিং করার পর আপনার কাঙ্ক্ষিত কাজটি আপনি পাবেন কি না সেটিও কিন্তু অনেকক্ষেত্রে আপনার সিভির উপর ও নির্ভর করছে। তাই বুঝতেই পারছেন, একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আপনার একটি তথ্যবহুল এবং সুন্দর সিভি থাকা কতটা জরুরি। আর আপনার পছন্দসই সুন্দর একটি সিভি আপনি মাইক্রোসফট ওয়ার্ড অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে খুব সহজেই তৈরী করে নিতে পারেন। এখানে আপনি ফ্রি অনেক টেম্পলেট পাবেন, যেগুলো ব্যবহার করেও আপনার সিভি টি তৈরী করে ফেলতে পারেন।
শুধুই কি সিভি তৈরী করতে মাইক্রোসফট ওয়ার্ড এর কাজ জানা প্রয়োজন? উত্তরটি অবশ্যই না। বরং মাইক্রোসফট ওয়ার্ড ব্যবহার করে আপনি আবেদনপত্র তৈরী, ডকুমেন্ট তৈরী থেকে শুরু করে ব্যানার, লিফলেট ও প্রস্তুত করতে পারবেন। তাই এটা বলার আর অপেক্ষা রাখে নাহ যে, একজন ফ্রিল্যান্সারের জন্য মাইক্রোসফট ওয়ার্ড এর ব্যবহার জানা কত জরুরি। আপনাকে বিভিন্ন সময় কোনো একটি কাজের জন্য আবেদন করার প্রয়োজন পড়তে পারে, কিংবা ডক ফাইল তৈরী করা লাগতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনি প্রয়োজনমতো শব্দ ছোট – বড় করে, বিভিন্ন ফ্রন্টে নিয়ে প্যারাগ্রাফ আকারে কোনো একটি ডকুমেন্ট খুব সহজেই তৈরী করে ফেলতে পারেন।
এছাড়াও আপনার তৈরীকৃত কোনো ডকুমেন্টকে পরবর্তীতে আপনার প্রয়োজন অনুসারে পরিবর্তন করতে পারেন অর্থাৎ বিভিন্ন শব্দ, ছবি, তথ্য এডিটিং করে সংরক্ষণ করতে পারেন। এজন্য আপনাকে মাইক্রোসফট ওয়ার্ড এর বিভিন্ন ট্যুলস যেমন, হেডার, ফুটার, ফন্ট মার্জিন, কলাম, ব্রেকস, হাইলাইটার ইত্যাদি বিষয়ের ব্যবহার জানতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি নিজে নিজে কাজ করার মাধ্যমে এসব বিষয় আয়ত্ত্বে আনতে পারেন। এছাড়াও অনলাইনে কোর্স কিংবা ইউটিউবে ভিডিও টিউটোরিয়াল দেখেও মাইক্রোসফট ওয়ার্ড এর কাজ শিখতে পারেন।
প্রেজেন্টেশন তৈরী
বিভিন্ন সময়ে নানান প্রজেক্টের জন্য একজন ফ্রিল্যান্সারকে প্রেজেন্টেশন তৈরী করতে হয়। অর্থাৎ আপনি যে প্রজেক্টে কাজ করছেন, সেই প্রজেক্টকে ক্লায়েন্টের প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী ডিসপ্লে তথা স্লাইড হিসেবে উপস্থাপন করার প্রয়োজন হতে পারে। আপনি ঐ প্রজেক্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কিভাবে করলেন কিংবা আপনার তৈরীকৃত প্রজেক্টটির ব্যবহার, গুরুত্ব সুন্দরভাবে উপস্থাপনের প্রয়োজনীয়তা দেখা যায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে। আর আপনার এই প্রেজেন্টেশনটি তৈরী করার জন্য মাইক্রোসফট পাওয়ার পয়েন্ট সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।
মূলত প্রেজেন্টেশন তৈরীর ক্ষেত্রে মাইক্রোসফট পাওয়ার পয়েন্ট বহুল ব্যবহ্রত এবং সর্বজন সমাদৃত। এছাড়াও গুগল স্লাইড, ক্যানভা, অনলি অফিস ইত্যাদি সফটওয়্যার ব্যবহার করেও আপনি প্রেজেন্টেশন তৈরী করতে পারেন। তবে আপনার শুধু পাওয়ার পয়েন্ট সম্পর্কে ভাল ধারণা থাকলেই আপনি তুলনামূলক কমসময়ে সুন্দর একটি প্রেজেন্টেশন তৈরী করে নিতে পারেন। তাই বুঝতেই পারছেন, একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আপনার এই মাইক্রোসফট পাওয়ার পয়েন্টে কাজ করায় দক্ষতা থাকাটা কত জরুরী।
সুন্দর, তথ্যবহুল এবং আকর্ষণীয়ভাবে একটি প্রেজেন্টেশন তৈরী করার জন্য আপনাকে পাওয়ার পয়েন্টের খুটিনাটি বিষয় সম্পর্কে দক্ষ হতে হবে। এজন্য আপনাকে পাওয়ার পয়েন্টের বিভিন্ন ট্যুলস যেমন, টাইটেল বার, মেন্যু বার, স্ট্যান্ডার্ড ট্যুল বার, আউট লাইন প্যান, ফরমেটিং ট্যুলবার, ড্রয়িং ট্যুলবার সহ বিভিন্ন বিষয়াদি নখদর্পনে রাখতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি কোনো কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে কিংবা ইউটিউবে টিউটোরিয়াল দেখেও পাওয়ার পয়েন্টে প্রেজেন্টেশন তৈরী করা শিখতে পারেন।পাওয়ার পয়েন্ট ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি কোনো একটি প্রজেক্টের জন্য ইমেজ, সাউন্ড, ভিডিও, এনিমেশন, চার্ট কিংবা গ্রাফ ব্যবহারের মাধ্যমে আকর্ষণীয় প্রেজেন্টেশন তৈরী করতে পারেন।
টাইপিং দক্ষতা
কম্পিউটারে টাইপিং সম্পর্কে একজন ফ্রিল্যান্সারের মোটামুটিরকম দক্ষতা থাকা জরুরী। বিভিন্ন সময়ে আপনাকে ক্লায়েন্টের সাথে যোগাযোগ করার প্রয়োজন পড়তে পারে। সেক্ষেত্রে ম্যাসেজের মাধ্যমে ক্লায়েন্ট কে ঐ প্রজেক্ট সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য কিংবা অগ্রগতি সম্পর্কে জানানো লাগতে পারে। আর এক্ষেত্রে আপনি যদি খুব ভাল এবং দ্রুত টাইপ করতে না জানেন, তবে ক্লায়েন্টের সাথে যোগাযোগ রক্ষার ক্ষেত্রে ভীষণ রকম ঝামেলা পোহাতে হবে। আবার কোনো একটি কাজের জন্য বিভিন্ন সময় ইমেইল কিংবা আবেদন পত্র প্রেরণ করতে হয়, সেক্ষেত্রে নির্ভূলভাবে দ্রুত টাইপিং করার দক্ষতা থাকাটা অতীব জরুরী। এছাড়াও আপনাকে বিভিন্ন সময়ে কোনো একটি প্রজেক্টের জন্য ডকুমেন্ট তৈরী করার প্রয়োজন পড়তে পারে। তাই বুঝতেই পারছেন একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আপনার নির্ভুল এবং দ্রুত টাইপ করার দক্ষতা থাকাটা কত জরুরী।
স্বাভাবিকভাবেই আমরা মোবাইলে খুব দ্রুত টাইপ করতে পারলেও কম্পিউটারে খুব দ্রুত টাইপ করতে পারি নাহ। এক্ষেত্রে আমরা প্রথমেই যে ভুলটা করি তা হলো কি-বোর্ড এ হাতের পজিশনটা ঠিকঠাক নিয়ম অনুযায়ী রাখি নাহ। এক্ষেত্রে আপনি কোনো কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র কিংবা অনলাইনে এ সম্পর্কিত টিউটোরিয়াল দেখে নিতে পারেন। এছাড়াও আপনি বিভিন্ন শর্টকাট ব্যবহার করেও দ্রুত কোনো কিছু টাইপ করতে পারবেন। অর্থাৎ আপনি বিভিন্ন কি-বোর্ড শর্টকাট কোড এবং কৌশল গুলো ব্যবহার করে আপনার টাইপিং এ দ্রুততা আনতে পারেন। সর্বোপরি টাইপিং এ দক্ষ হতে হলে বেশি বেশি টাইপ করতে হবে। আপনি যত বেশি টাইপিং করার অনুশীলন করবেন, তত আপনার টাইপিং দ্রুত হবে। এছাড়াও আপনি ভাল টাইপিং দক্ষতা আনলে ডেটা এন্ট্রি কিংবা কন্টেন্ট রাইটিং এর মতো কাজ ও করতে পারেন। তাই যথাসম্ভব চেষ্টা করুন কোনো কিছু বাংলা এবং ইংরেজীতে দ্রুত ও নির্ভুলভাবে টাইপ করার দক্ষতা অর্জন করার।
অন্যান্য দক্ষতা
ক্ষেত্র বিশেষ একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আপনার বিভিন্ন রকম কম্পিউটার স্কিলস এর প্রয়োজন হতে পারে। যেমন, কোনো হিসাব-নিকাশের তথ্য সংরক্ষণের জন্য মাইক্রোসফট এক্সেল ব্যবহারে দক্ষতা প্রয়োজন। এছাড়াও এই স্প্রেডশীট ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি আপনার প্রজেক্টের সময়সূচী, কিংবা আপনার পেমেন্টের হিসাব ইত্যাদি টুকে রাখতে পারবেন। আর আপনি যদি কম্পিউটার অপারেটিং অর্থাৎ ডেটা এন্ট্রির কাজ করতে চান তবে মাইক্রোসফট এক্সেলের খুঁটিনাটি ব্যবহার আপনার নখদর্পনে রাখতে হবে।
এছাড়াও আপনার প্রজেক্টের জন্য বিভিন্ন তথ্য অনুসন্ধান করার প্রয়োজন হতে পারে। অর্থাৎ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় ডেটা কালেক্ট তথা তথ্য সংগ্রহ করা লাগতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনাকে বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিন যেমন, গুগল, ইয়াহু, বিং ইত্যাদিতে তথ্য অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে পারদর্শী হতে হবে।
আর বিভিন্ন নির্দিষ্ট কাজের জন্য নির্দিষ্ট কিছু সফটওয়্যার ব্যবহারে অবশ্যই পারদর্শী হতে হবে। এই ব্যাপারটি মূলত আপনার কাজের ধরনের উপর নির্ভর করছে। যেমন আপনি যদি একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে আপনার ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার শুরু করতে চান তবে আপনাকে এডোবি ফটোশপ, এডোবি ইলাস্ট্রেটর ইত্যাদি ট্যুলস গুলোর ব্যবহার ভালভাবে জানতে হবে। ঠিক তেমনি আপনি যদি একজন ভিডিও এডিটর হতে চান তবে আপনাকে এডোবি প্রিমিয়ার প্রো ব্যবহারে দক্ষতা থাকতে হবে। এভাবে আপনার কাজের ধরন অনুসারে প্রয়োজনীয় কম্পিউটার ট্যুলস এর ব্যবহার জানতে হবে।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে বুঝতেই পারছেন একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে আপনার ব্যাসিক কম্পিউটার জ্ঞান থাকা কতটা জরুরী। প্রয়োজনীয়তার কথা মাথায় রেখে উপরোক্ত নির্দেশনা অনুযায়ী বিভিন্ন কম্পিউটার ট্যুলসের যথাযথ ব্যবহারে দক্ষতা অর্জন করুন। পর্যাপ্ত দক্ষতা অর্জন করে যেকোনো ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে ঝামেলাহীনভাবে কাজ শুরু করুন। সর্বোপরি ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে নিজের, পরিবারের এবং দেশের উন্নতিতে ভূমিকা রাখুন।