You are here
Home > ফেসবুক > ফেসবুক কি? ফেসবুক কিভাবে তৈরী হলো? ফেসবুক কিভাবে আয় করে?

ফেসবুক কি? ফেসবুক কিভাবে তৈরী হলো? ফেসবুক কিভাবে আয় করে?

ফেসবুক

বর্তমান সময়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বহুল ব্যবহৃত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হলো ফেসবুক। বন্ধু-বান্ধব,আত্মীয়স্বজনের গন্ডি পেরিয়ে বিভিন্ন দেশের,বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের সাথে খুব সহজে ভাবের আদান-প্রদান করা সম্ভবপর হয়েছে ফেসবুকের মাধ্যমে। শুধু যোগাযোগই নয় বরং নিজস্ব মতামত,চিন্তাভাবনা,ব্যবসার প্রচারণা থেকে শুরু করে বর্তমানে প্রাত্যাহিক জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে ফেসবুক। এছাড়াও ফেসবুক কমার্স এর বদৌলতে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে লাখ লাখ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

ফেসবুক কিভাবে তৈরী হলো?

২০০৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি মার্ক জাকারবার্গ তাঁর সহপাঠী ক্রিস হিউজস, এডওয়ার্ডো সেভারিন, ডাস্টিন মস্কোভিতস এর সহযোগীতায় প্রতিষ্ঠা করেন বর্তমান সময়ের বহুল ব্যবহ্রত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক।যা পরবর্তীতে সম্পুর্ণ রূপে বদলে দেয় যোগাযোগের চিত্রপট। নানা প্রান্তের নানা ভাষাভাষীর মানুষকে নিয়ে আসে একটি ওয়েবসাইটে।মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে করে দেয় সহজ। তবে মানুষের জীবনযাত্রাকে সহজ করে দেয়া এই আবিষ্কারের পিছনের ইতিহাস টা অতো টা সহজ ছিল নাহ। অক্লান্ত পরিশ্রম,মেধা,ব্যর্থতার সংমিশ্রণেই আমরা পেয়েছি আজকের এই ফেসবুক।

হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া মার্ক জাকারবার্গ এর ফেসবুকের ভাবনাটা আসে ২০০৩ সালের ২৮ অক্টোবর ফেসম্যাশ ডট কম নামে একটি ওয়েবসাইট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। তবে তাঁর প্রতিষ্ঠিত এই ফেসম্যাশ ওয়েবসাইটটি সফলতার মুখ দেখতে পারেনি। ফেসম্যাশ ওয়েবসাইটটির জন্য নিজের অধ্যয়নরত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হার্ভাডের ডাটাবেজ হ্যাক করায় ঐ প্রতিষ্ঠানেরই অন্যান্য শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়তে হয়। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই ফেসম্যাশ ডট কম ওয়েবসাইটটি বন্ধ করে দেন মার্ক জাকারবার্গ।

ফেসম্যাশ ডট কম বন্ধের পর আবার নিজ মনোবলে নিরন্তর চেষ্টা চালান নতুন আরেকটি ওয়েবসাইট তৈরী করার। আর সেই চেষ্টাকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই ২০০৪ সালের ১১ই জানুয়ারী “দ্যা ফেসবুক ডট কম” ডোমেইন কিনে ফেলেন। “দ্যা ফেসবুক” এর যাত্রা শুরু হওয়ার এক দিনের মাথায় এতে রেজিস্ট্রেশন করে হার্ভাডের ১২০০ জন শিক্ষার্থী।তবে খুব বেশিদিন আর হার্ভাডের গন্ডিতে সীমাবদ্ধ থাকেনি দ্যা ফেসবুক। খুব দ্রুতই এর কার্যক্রম ছড়িয়ে পড়ে বোস্টন শহরের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে। এবং খুব দ্রুত ওয়েবসাইটটির ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়ে যায়। অতঃপর ঐ বছরের শেষে এসে এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়ে দাড়ায় দশ লাখে।

মার্ক জাকারবার্গ তাঁর তৈরীকৃত “দ্যা ফেসবুক” এ রাতারাতি সাফল্য পাওয়ার পর মনোযোগ দেন এই “দ্যা ফেসবুক” নামটিকে সহজ এবং শ্রুতিমধুর করার দিকে। এবং সেই লক্ষ্যে ২০০৫ সালের আগষ্টে “দ্যা ফেসবুক” থেকে সংক্ষিপ্ত করে এর নামকরণ করা হয় ফেসবুক। এবং এজন্য দুই লাখ মার্কিন ডলার ব্যয় ও করতে হয়েছিল তাকে।

২০০৫ সাল পর্যন্ত শুধু বিভিন্ন প্রতিষ্টানের কর্মীরা ফেসবুক ব্যবহার করতে পারত।পরবর্তীতে ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সবার জন্য উম্মুক্ত করার পরপরই রাতারাতি এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা কোটি ছাড়িয়ে যায়। এরপর থেকে ফেসবুক এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা ক্রমশ বেড়েই চলছে। ক্রমবর্ধমান এই সংখ্যা বর্তমানে গিয়ে দাড়িয়েছে ২৮০ কোটিতে। সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে ক্রমশ পাল্টিয়েছে প্রেক্ষাপট।ব্যবহারকারীর জীবনমানকে সহজ করার লক্ষ্যে প্রতিনিয়ত ফেসবুকে যুক্ত হচ্ছে নতুন সব ফিচার।



ফেসবুক কিভাবে আয় করে?

ফেসবুকের আয়ের মূল উৎস হচ্ছে বিজ্ঞাপন। বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমেই ফেসবুক তার সিংহভাগ আয় করে থাকে।বলতে গেলে ফেসবুকের আয়ের ৯৯ শতাংশই আসে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে।

বর্তমানে যেকোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্বল্প খরচে এবং খুব দ্রুত একটা বড় সংখ্যক কাস্টমারের কাছে তাদের সেবা বা পণ্য পৌছে দেওয়ার জন্য ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে।শুধু যে একটা বড় সংখ্যক কাস্টমারের কাছে পৌছানো যায় এমনটি নয়। বরং ফেসবুক এ বিজ্ঞাপন দেওয়ার সময় আপনি কোন বয়সী মানুষের কাছে কিংবা কোন এলাকার মানুষের কাছে আপনার সেবা বা পণ্যটির বিজ্ঞাপন দিতে চাচ্ছেন সেটাও নিশ্চিত করা যায়। তাই সময়ের সাথে সাথে বিজ্ঞাপনদাতার হার যেমন বাড়ছে ঠিক সেই সাথে বাড়ছে ফেসবুকের আয়ও।

সাইডবার এ্যাড

ফেসবুক চালানোর সময় প্রায়শই দেখবেন যে,নিউজফিডে কোনো কোম্পানীর কোনো একটি পণ্যের ঝকঝকা ছবি আপনার সামনে ভাসছে। একটু ভালভাবে খেয়াল করলে দেখবেন যে এর ডান পাশে স্পন্সরড (Sponsored) লেখা থাকে। এটিই মূলত কোম্পানী বা প্রতিষ্ঠানটি কতৃক ফেসবুকে প্রদত্ত বিজ্ঞাপন।

পেইজ প্রোমোটিং এ্যাড

বর্তমানে প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেরই একটি ফেসবুক পেইজ থাকে। এই ফেসবুক পেইজ এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণ গ্রাহকদের বিভিন্ন আপডেট দিয়ে থাকে। এজন্য প্রায় সব প্রতিষ্ঠানই চায় তাদের পেইজের ফলোয়ার্স সংখ্যা বেশি হোক।তাই প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পেইজ বুস্ট করে থাকে। যার ফলস্বরূপ আমরা বিভিন্ন সময় আমাদের ফেসবুক নিউজফিডে বিভিন্ন পেইজের লাইক বাটন সহ ছবি দেখতে পাই।

এছাড়াও অনেকভাবে কোম্পানিগুলো তাদের পেইজ কিংবা পোষ্টের বিজ্ঞাপন করতে পারে। এই বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য ফেসবুক মুলত কয়েকটি ভাবে নির্দিষ্ট একটি চার্জ করে থাকে। যেমন,

CPM ( Cost Per 1000 Impressions) অর্থাৎ বিজ্ঞাপনদাতার বিজ্ঞাপনের ১০০০ ইম্প্রেশনের উপর নির্ভর করে ফেসবুক একটা চার্জ করে।

CPR ( Cost Per 1000 People Reached )  অর্থাৎ  বিজ্ঞাপনদাতার বিজ্ঞাপনে প্রতি ১০০০ মানুষ বিজ্ঞাপনটি দেখেছে। এর উপর ফেসবুক একটা চার্জ করে থাকে।

CPC ( Cost Per Click ) অর্থাৎ বিজ্ঞাপনদাতার বিজ্ঞাপনটিতে কতজন মানুষ ক্লিক করছে বা কতটি লাইক আসছে।এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক চার্জ করে থাকে।

আপনার যদি একটি ফেসবুক পেইজ থেকে থাকে। তবে দেখবেন যে, আপনার পেইজটি প্রোমোট করতে চাইলে ফেসবুক তাঁর একটি নির্দিষ্ট রেট দিয়ে থাকে।

যেমন,

£3 = Est. 45 – 180 Likes Per Day 

£6 = Est. 90 – 360 Likes Per Day  

£12 = Est. 180 – 720 Likes Per Day 

£15 = Est. 225 – 900 Likes Per Day 

£18 = Est. 270 – 1080 Likes Per Day

অথবা 

$5 = Est 44 – 176 Likes per day 

$10 = Est 88 – 353 Likes per day

$15 = Est 132 – 529 Likes per day 

$20 = Est 176 – 706 Likes per day 

$25 = Est 221 – 882 Likes per day

পেমেন্ট রেভিনিউ

ফেসবুক বিভিন্ন হোলসেলার বা ডেভেলপিং কমিউনিটি এর কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ আয় করে থাকে। মূলত যেসব ডেভেলপার বা হোলসেলাররা ফেসবুকের পেমেন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার টি ব্যবহার করে তাদের কাছ থেকে এই অর্থ আয় হয়। তাদের ফেসবুকে যেকোনো বিজনেস ট্রানজ্যাকশনের জন্য ফেসবুক ফি নিয়ে থাকে।

ফেসবুক গেমস

Mafia Wars, Empire & allies,City Ville,Farmvillie ইত্যাদি জনপ্রিয় সব গেমস সহ ফেসবুকের রয়েছে আরো অনেক গেমস।উল্লেখ্য গেমসগুলো আমেরিকান গেম ডেভেলপিং প্রতিষ্ঠান Zynga.Inc এর।যখন কেউ এইসকল গেমসগুলো খেলে তখন এখান থেকে অর্জিত অর্থের ৭০ ভাগ পায় Zynga.Inc। আর বাকি ৩০ ভাগ অর্থ পায় ফেসবুক।যা ফেসবুকের আয়ের অন্যতম উৎস।

Jibbigo App

Jibbigo মূলত একটি ল্যাঙ্গুয়েজ ট্রান্সলেশন অ্যাপ। যেটি ফেসবুকের পোষ্ট বা চ্যাট কে বিভিন্ন ভাষায় রূপান্তর করতে পারে।বিভিন্ন বড় কোম্পানী তাদের বিজ্ঞাপন গুলোকে বিভিন্ন ভাষায় রূপান্তর করে ঐ অঞ্চলের মানুষদের কাছে প্রচার করে। তাই এটি ও ফেসবুকের আয়ের একটি বড় মাধ্যম।

এছাড়াও হোয়াটসঅ্যাপ,ইন্সটাগ্রাম,অকিউলাস ভিআর  এর মাধ্যমে ও ফেসবুক আয় করে থাকে।

প্রতিনিয়ত আমাদের ব্যবহৃত এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক যেরূপ আমাদের থেকে অর্থ উপার্জন করছে। ঠিক তেমনি ফেসবুক কে কাজে লাগিয়ে ও নিজেকে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারছে অনেক তরুণ। তাই ফেসবুকের সঠিক ব্যবহারে লাভবান হতে পারেন আপনিও। তাছাড়া সব বয়সী মানুষের কাছে জনপ্রিয় এই প্ল্যাটফর্মে আপনার নিজস্ব স্কিল,চিন্তাভাবনা ও ছড়িয়ে দিতে পারেন সকলের মাঝে।সর্বোপরি ফেসবুকের ব্যবহার যেমন আপনার জীবনমানে বড় এক পরিবর্তন আনছে। ঠিক তেমনি আপনার সৃজনশীলতাকে পুরো পৃথিবীকে দেখানোর দ্বার ও উম্মোচন করছে।

Facebook Comments
Top