স্যাটেলাইট ও অপটিক্যাল ফাইবার এর পার্থক্য: চাকরির পরীক্ষার ক্ষেত্রে বা প্রতিষ্ঠানের যেকোন পরীক্ষার জন্য স্যাটেলাইট ও অপটিক্যাল ফাইবার সম্পর্কে জেনে রাখাটা খুবই জরুরী। তাছাড়াও যারা জানতে পছন্দ করেন এবং সাধারণ জ্ঞান অর্জন করতে অধিক বেশি আগ্রহী, তারা প্রায় প্রশ্ন করেন— স্যাটেলাইট ও অপটিক্যাল ফাইবার এর পার্থক্য কি? আর তাইতো ফিরে এসেছি আমাদের আজকের এই আলোচনা নিয়ে।
সুপ্রিয় পাঠক বন্ধুরা সবাইকে স্বাগতম জানাচ্ছি আমাদের আজকের আলোচনা পর্বে। আজ আমরা স্যাটেলাইট ও অপটিক্যাল ফাইবার এর পার্থক্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানব। আশা করছি, আপনি যদি আমাদের এই আর্টিকেল সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে স্যাটেলাইট ও অপটিক্যাল ফাইবার এর পার্থক্য সহ আরো গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়বলি সম্পর্কে অবগত হতে পারবেন। তাহলে আসুন শুরু করি।
স্যাটেলাইট ও অপটিক্যাল ফাইবার এর পার্থক্য
আপনি যদি এই দুইটি বিষয়বস্তুর মধ্যে পার্থক্য কি তা সম্পর্কে জানতে চান এবং পুরোপুরি ভাবে আয়ত্ত করতে চান, তাহলে অবশ্যই আপনাকে অপটিক্যাল ফাইবার এবং স্যাটেলাইট এর বিষয় সম্পর্কে আগে বিস্তারিত জানতে হবে। তাই ধারাবাহিকভাবে আমরা স্যাটেলাইট কি, স্যাটেলাইট কত প্রকার এবং এর ব্যবহার কি, পাশাপাশি অপটিক্যাল ফাইবার কি এবং অপটিক্যাল ফাইবারের কাজ কি এ বিষয়ে আলোচনা করব।
অতঃপর আপনাদের সামনে তুলে ধরব, স্যাটেলাইট ও অপটিক্যাল ফাইবার এর পার্থক্য। তাই ধৈর্য সহকারে অবশ্যই আমাদের আজকের আর্টিকেল মনোযোগ সহকারে পড়ুন। কেননা স্যাটেলাইট ও অপটিক্যাল ফাইবার দুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা সম্পর্কে আমাদের জানাটা খুবই জরুরী।
স্যাটেলাইট কি?
স্যাটেলাইট হচ্ছে মহাশূন্যে অবস্থিত কৃত্রিম উপগ্রহ। মূলত মানব সৃষ্ট যেসব বস্তু নির্দিষ্ট কতগুলো কাজের জন্য পৃথিবীর চারদিকে মহাশূন্যের নির্দিষ্ট কক্ষপথে ঘুরতে পারে তাকেই স্যাটেলাইট বলা হয়। এর আরেক নাম কৃত্রিম উপগ্রহ যা রেডিও মাইক্রোওয়েভ ব্যবহার করে কাজ করে।
অপটিক্যাল ফাইবার কি?
অপটিক্যাল ফাইবার হল কাচ অথবা প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি করা একটি স্বচ্ছ ও নমনীয় ফাইবার। মূলত পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে সিগনাল প্রেরণে স্যাটেলাইটের পাশাপাশি অপটিক্যাল ফাইবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অপটিক্যাল ফাইবার কে অত্যন্ত সরু এক ধরনের কাঁচের তত্ত্বও বলা হয়।
সুতরাং এক ধরনের পাতলা স্বচ্ছ তত্ত্ব বিশেষ সাধারণত বিশুদ্ধ কাজ অথবা প্লাস্টিক দিয়ে বানানো বস্তুই হচ্ছে অপটিক্যাল ফাইবার, যা আলো পরিবহনে ব্যবহৃত হয়।
স্যাটেলাইট এর প্রকারভেদ
স্যাটেলাইট মূলত নয় প্রকার। সেগুলো হলো:
১. এষ্ট্রোনােমি স্যাটেলাইট
২. এটমসফিয়ারিক স্যাটেলাইট
৩. কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট
৪. নেভিগেশন স্যাটেলাইট
৫. রিকনাইসেন্স স্যাটেলাইট
৬. রিমােট সেনসিং স্যাটেলাইট
৭. সার্চ ও রেসকিউ স্যাটেলাইট
৮. স্পেস এক্সপ্লোরেশন স্যাটেলাইট
৯. ওয়েদার স্যাটেলাইট।
অপটিক্যাল ফাইবার এর প্রকারভেদ
অপটিক্যাল ফাইবারের নির্দিষ্ট প্রকারভেদ। এটি মূলত বিভিন্নভাবে বিভক্ত। অপটিক্যাল ফাইবার বেশ কয়েকটি সুযোগের উপর ভিত্তি করে বিভক্ত হয়ে থাকে। সেই সূচক সমূহ হলো:
- প্রতিসরণ
- আলোর বিচ্ছুরণ
- ফাইবার তৈরিতে ব্যবহৃত উপাদান
এবার চলুন জেনে নেই অপটিক্যাল ফাইবার এই তিনটি সুযোগের ওপর ভিত্তি করে কয়টি ভাগে বিভক্ত এবং সেই বিভক্তের নাম গুলো কি কি।
প্রতিসরণ সূচকের উপর ভিত্তি করে অপটিক্যাল ফাইবার দুই ভাগে বিভক্ত:
- Mono Mode Optical Fibre
- Multi-mode Optical Fiber
আবার আলোর বিচ্ছুরণের উপর ভিত্তি করেও দুই ভাগে বিভক্ত। যথা:
- Single-Mode Fibers – এই ফাইবারগুলি তুলনামূলক দীর্ঘ দূরত্বে সংকেত প্রেরণের জন্য ব্যবহৃত হয়।
- Multimode Fibers – এই ফাইবারগুলি স্বল্প-দূরত্বের সংকেত প্রেরণের জন্য ব্যবহৃত হয়।
একইভাবে ফাইবার তৈরিতে ব্যবহৃত উপাদানের উপর ভিত্তি করে দুই ভাগে বিভক্ত। সেগুলো হলো:
- Plastic Optical Fibers – Polymethylmethacrylate নামক উপাদান দিয়ে তৈরি।
- Glass Fibers – অত্যন্ত সূক্ষ্ম কাচের ফাইবার দিয়ে গঠিত।
স্যাটেলাইট এর কাজ এবং ব্যবহার
স্যাটেলাইট মূলত পৃথিবীকে কেন্দ্র করে চারিদিকে ঘূর্ণায়মান নির্দিষ্ট কাজে ব্যবহৃত একটি কৃত্রিম যন্ত্র। এটি রকেটের মাধ্যমে উৎক্ষেপণ করে পৃথিবীর অরবিটালে বা কক্ষপথে স্থাপন করা হয়। স্যাটেলাইট কে যদি ২৪ ঘন্টায় একবার পৃথিবীকে ঘুরিয়ে আনা যায় তাহলে পৃথিবী থেকে মনে হয় সেটি যেন আকাশের কোন এক জায়গায় স্থির হয়ে আছে। আর এই ধরনের স্যাটেলাইট কে জিও স্টেশনারি স্যাটেলাইট বলা হয়।
আধুনিক এই বিষে যোগাযোগ ব্যবস্থায় স্যাটেলাইট কমিউনিকেশনের ভূমিকা পালন করছে গুরুত্বপূর্ণ ভাবে। এই প্রযুক্তির কল্যাণে পৃথিবীর এক প্রান্তের সংঘটিত কোন ঘটনা অন্য প্রান্তে সরাসরি দেখানো সম্ভব হচ্ছে।
শুধু তাই নয় বড় বড় টেলি মিডিয়াগুলো বিশ্বকাপে তাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু রাখতে সক্ষম হচ্ছে এই টেলিকাস্টের মাধ্যমে। স্যাটেলাইট আছে বলেই বিশ্ব পরিস্থিতি সাধারণ জনগণের কাছে অতি দ্রুত উপস্থাপিত হচ্ছে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার এত উন্নতি ঘটছে।
অপটিক্যাল ফাইবারের কাজ ও ব্যবহার
স্যাটেলাইটের যেমন সুবিধা হিসেবে অনেক কিছু রয়েছে ঠিক অপটিক্যাল ফাইবারেরও ব্যবহার প্রচুর। অপটিক্যাল ফাইবারের কাজ হচ্ছে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে সিগন্যাল প্রেরণে ভূমিকা রাখা। আর এটা শুনে নিশ্চয়ই অপটিক্যাল ফাইবারের কাজ এবং ব্যবহার বিধি সম্পর্কে অল্পস্বল্প হলেও ধারণা পেয়েছেন। তবুও বিষয়টি ক্লিয়ার করে বোঝার জন্য অপটিক্যাল ফাইবারের ব্যবহার সমূহ নিচে উল্লেখ করা হলো:
- শেয়ারিং এর জন্য
- ইন্টারনেট কানেক্ট এর জন্য
- কেবল ডিশ এর জন্য
- মেডিকেল গেজেট এবং মিলিটারি কমিউনিকেশনের জন্য।
তবে এই প্রত্যেকটি ক্ষেত্রের মধ্যে অপটিক্যাল ফাইবার সব থেকে বেশি ব্যবহৃত হয় ইন্টারনেট কমিউনিকেশনের জন্য। এবার চলুন জেনে নেই, স্যাটেলাইট ও অপটিক্যাল ফাইবার এর পার্থক্য।
স্যাটেলাইট এবং অপটিক্যাল ফাইবারের পার্থক্য কি কি?
মূলত স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন এবং অপটিক্যাল কমিউনিকেশন এর মধ্যে নিম্ন বর্ণিত ১২-১৩ টি পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। যা ছকের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হলো।
পড়ে নিন- স্যাটেলাইট ও অপটিক্যাল ফাইবার এর পার্থক্য
স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন | অপটিক্যাল কমিউনিকেশন |
স্যাটেলাইট যোগাযোগ প্রচারের মাধ্যম হিসেবে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গ ব্যবহার করে। | অপটিক্যাল যোগাযোগ প্রচারের মাধ্যম হিসেবে আলোক রশ্মি ব্যবহার করে। |
স্যাটেলাইট থেকে পৃথিবীতে ইন্টারনেট প্রদান করা হয়। | অপটিক্যাল যোগাযোগে, যোগাযোগ অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে ঘটে। |
স্যাটেলাইট যোগাযোগে, সংকেত প্রেরণ এবং গ্রহণের জন্য বিশেষ ধরণের অ্যান্টেনার প্রয়োজন হয়। | অপটিক্যাল যোগাযোগে, যোগাযোগের জন্য কোন বিশেষ অ্যান্টেনার প্রয়োজন হয় না। |
বায়ু স্যাটেলাইট যোগাযোগের মাধ্যম। | অপটিক্যাল যোগাযোগের সময়, ফাইবার হল সংক্রমণের মাধ্যম। |
স্যাটেলাইট যোগাযোগের প্রতিটি ট্রান্সপন্ডার 36 মেগাহার্টজ ব্যান্ডউইথ সমর্থন করে এবং একই সাথে 12টি চ্যানেল ধরে রাখে। | অপটিক্যাল ফাইবার খুব বড় পরিসরের একটি ব্যান্ডউইথ সমর্থন করে এবং একটি কেবল অনেক ফাইবারকে একত্রিত করে। |
স্যাটেলাইট যোগাযোগ সুবিধাজনক এবং খুব দীর্ঘ দূরত্ব যোগাযোগের জন্য কার্যকর। | পয়েন্ট টু পয়েন্ট স্বল্প দূরত্ব যোগাযোগের জন্য, অপটিক্যাল যোগাযোগ উপযুক্ত এবং কার্যকর। |
ইনস্টলেশন খরচ খুব ব্যয়বহুল। | স্যাটেলাইট যোগাযোগের তুলনায় ইনস্টলেশনের খরচ খুবই কম। |
ডেটা রেটস (Date Rates) কম। | ডেটা রেটস বেশি।- |
ব্যান্ডউইডথ কম। | ব্যান্ডউইথ বেশি। |
কম নির্ভরযোগ্য | বেশি নির্ভরযোগ্য। |
ডেটা আদান প্রদানের সময় বেশি লাগতে পারে। | ডেটা আদানপ্রদানে delay নেই বললেই চলে। |
খরচ বেশি। | খরচ তুলনামূলকভাবে অনেক কম। |
পৃথিবীর যেকোনো জায়গাতে সিগন্যাল পাওয়া সম্ভব। | সব জায়গাতে অপটিক্যাল ফাইবার |
আরও দেখুনঃ
পরিশেষে: তো সুপ্রিয় পাঠক বন্ধুরা আশা করি আমাদের এই আলোচনার মাধ্যমে স্যাটেলাইট ও অপটিক্যাল ফাইবারের পার্থক্য সম্পর্কে আপনারা পুরোপুরি জানতে সক্ষম হয়েছেন। আমাদের আজকের আলোচনা করব এখানেই শেষ করছি যদি কোন আপনাদের প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকে আমাদের কমেন্ট করে জানান, সেই সাথে নিয়মিত যে কোন প্রশ্ন নোটিফিকেশন পেতে আমাদের ওয়েবসাইট বুক মার্ক অথবা সাবস্ক্রাইব করে রাখুন। সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন আল্লাহ হাফেজ।
আরো পড়ুনঃ
- জেনে নিন ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার সম্পূর্ণ গাইডলাইন
- মোবাইল দিয়ে লোগো ডিজাইন করার সবচেয়ে সহজ নিয়ম ও 5 টি অ্যাপস
- ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য কোন ল্যাপটপ ভালো, ডিজিটাল মার্কেটিং এর জন্য ল্যাপটপ
- সোসাল মিডিয়া মার্কেটিং কি, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর গুরুত্ব
- মোবাইল দিয়ে গ্রাফিক্স ডিজাইন, মোবাইল দিয়ে লোগো ডিজাইন, মোবাইল দিয়ে ব্যানার তৈরি
- মোবাইল দিয়ে ইউটিউব চ্যানেল খোলার নিয়ম | মোবাইল দিয়ে কিভাবে ইউটিউব চ্যানেল খুলবো?
- সৃজনশীল উদ্যোক্তা হয়ে ঘরে বসেই আয় করুন
- লোগো ডিজাইন কি? লোগো ডিজাইন করে কত টাকা আয় করা সম্ভব?
- শেয়ার কেনার সময় যেসব ভুল করা যাবেনা
- শেয়ার বাজার এর বর্তমান অবস্থা এবং যেভাবে বিনিয়োগ করবেন
- চাকরির আবেদন পত্র লিখার নিয়ম
- ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস তালিকা – Best Freelancing Marketplace List